আপনি পড়ছেন

কাঁচাপাট সংকটে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি কম হওয়ায় বাড়ছে পণ্যের মজুদ। বর্তমানে প্রায় ৩১৫ কোটি টাকার পাটপণ্য অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এসব পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে না পেরে আর্থিক সংকটে পড়েছে পাটকলগুলো। এতে শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়মিত মজুরিও পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

crop crisis

পাটকলগুলোর সূত্রে জানা যায়, খুলনা-যশোর অঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ণ, আলীম, জে জে আই ও কার্পেটিং এই ৯টি পাটকল রয়েছে। এসব পাটকলে স্যাকিং, হেসিয়ান, সিবিসি এবং ইয়ার্ন এই চার ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়।

চলতি অর্থ বছরে এসব পাটকলে দৈনিক ৩ হাজার ৬৫০টি তাঁত চালু রেখে পণ্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয় বিজেএমসি। কিন্তু বর্তমানে চালু রয়েছে ২ হাজার ৯৯টি তাঁত। যা লক্ষ্যমাত্রার ৫৭ শতাংশ। ফলে মিলগুলির ৪৭ শতাংশ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে রয়েছে।

এদিকে বর্তমানে খুলনা যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে মজুদ পণ্যের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩১৫ কোটি টাকা।

মিল কর্তৃপক্ষ বলছেন, অর্থাভাবে চাহিদামত কাঁচাপাট ক্রয় সম্ভব হচ্ছে না। সম্ভব হচ্ছে না লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদনও।

অন্যদিকে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে কাঁচামাল হিসেবে মিলগুলির পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৬ কুইন্টাল। কিন্তু গত চার মাসে কেনা হয়েছে মাত্র ৮১ হাজার ৬১০ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১১ শতাংশ। অবশ্য বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ জানায়, উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হলে অর্থ সংকট কাটবে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের কার্যকরী আহবায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, বর্তমানে কাঁচা পাটের মওসুম চলছে। অথচ পাটক্রয়ে অর্থ বরাদ্দ নেই। ফলে এখন স্বল্পমূল্যে পাটক্রয় করতে পারছে না মিলগুলো। পরবর্তীতে বেশি মূল্য দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাট ক্রয় করতে হবে। এতে পাটপণ্যের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যাবে। লোকসানে পড়বে মিলগুলো।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিকরা নিয়মিত মজুরি পাচ্ছে না। বছরের প্রতি মাসে যদি ঈদ বা নির্বাচন থাকতো তাহলে শ্রমিকরা নিয়মিত মজুরি পেত। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি ও বেতন প্রদান করা হয়। একই সাথে ঈদ-উল-আযহার পূর্বে শ্রমিক-কর্মচারীদের আংশিক মজুরি ও বোনাস প্রদান করা হয়েছিল। সর্বশেষ চলতি মাসে শ্রমিক-কর্মচারীদের সকল মজুরি ও বেতন প্রদান করা হয়েছে।

‘আবার কবে মজুরি প্রদান করা হবে সে বিষয়ে কেউ জানে না। এ অবস্থার পরিত্রাণের জন্য মওসুমেই পাটক্রয়ে অর্থ বরাদ্দ এবং উৎপাদিত পাটপণ্য বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই শ্রমিক নেতা।’

ক্রিসেন্ট জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক গাজী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বর্তমানে বরাদ্দ নেই। একই সাথে প্রচুর পরিমাণ উৎপাদিত পণ্য মজুদ রয়েছে। দেশে ও বহির্বিশ্বে চাহিদা কম। চাহিদা কমে যাওয়ায় বিক্রি করতে পারছি না। আর্থিক সংকট চলছে। ফলে কাঁচা পাট কিনতে পারছি না। মওসুম শেষ হওয়া শর্তেও কাঁচা পাটের অভাবে মিলে দৈনিক উৎপাদন যেখানে ৭০ টন ছিল, সেখানে ২৫-২৬ টনে নেমে এসেছে। স্থানীয় বাজারে চাহিদা বেড়েছে। চাতাল মিলে প্রচুর পাট পণ্যের প্রয়োজন হয়। ২০১০ সালের পাটের মোড়কীকরণের যে আইন আছে সেটি বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় বাজারে পাট বিক্রি করা সম্ভব হবে। মিলগুলো আধুনিক করার জন্য সরকারের উদ্যোগ রয়েছে। খুলনার প্লাটিনাম মিলসহ ৬টি মিলে বিএমআরই এর পরিকল্পনা রয়েছে। মিলগুলো বিএমআরই এর কোনো বিকল্প নেই।

ইস্টার্ণ জুট মিলের প্রকল্প প্রধান ড. জিএএম মাহবুব উর রশিদ জুলফিকার বলেন, পাটক্রয়ে অর্থের যোগান দিতে না পারায় উৎপাদন কমেছে। মিলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৩৪ মেট্রিক টন। এখন সাড়ে ৭ মেট্রিকটন থেকে ১০ মেট্রিকটন পর্যন্ত পাটপণ্য উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদন হ্রাস পেলে ব্যয়ও বেড়ে যায়। এতে লোকসানে হচ্ছে। তবে পাটক্রয় বাড়লে উৎপাদনও বাড়বে।

তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে চাহিদা কমে যাওয়া মিলে পণ্য মজুদের পরিমাণ বাড়ছে। স্থানীয় বাজারে পণ্যে পাটের মোড়কীকরণ আইন বাস্তবায়ন হলে পণ্য বিক্রি বেড়ে যাবে। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা।

বিজেএমসি’র আঞ্চলিক সমন্বয় কর্মকর্তা শেখ রহমত উল্লাহ জানান, অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় পাটক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। বহির্বিশ্বে চাহিদা কমে গেছে। ফলে উৎপাদিত পাট পণ্যের মজুদ বেড়ে গেছে। মজুদ পণ্য বিক্রি করতে পারলে মিলগুলোর সংকট কেটে যাবে। প্রয়োজনীয় পাট ক্রয় করতে পারবে। পাটের মোড়কীকরণ আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে স্থানীয় বাজারে পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে। দুই-এক মাসে সংকট সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদী।

শেখ দিদারুল আলম, ইউএনবি।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.