বালাকোটে হামলার পর ৩৫টি লাশ সরিয়ে নেয় পাক সেনারা?

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪৯ সেনা নিহতের পর গত মঙ্গলবার ভোররাতে পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-ই-মোহাম্মাদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারত। পুলওয়ামা হামলার দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মাদ।

হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, তিন থেকে সাড়ে তিন শ জইশ-ই-মোহম্মাদের যোদ্ধা ও অন্যান্য লোক মারা গেছে। কিন্তু পাকিস্তান সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে।

ইসলামাবাদ জানায়, পাহাড়ের গাছপালা ও সবুজ মাঠে বিমান হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে কেউ হতাহত হয়নি।

পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, হামলায় একটি কাক ছাড়া কেউ মারা যায়নি।

এ ছাড়া প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও বালাকোটের সেই জাব্বা গ্রাম পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যাতে বলা হয়, ভারতের দাবির কোনো বাস্তবতা তারা দেখতে পাননি।

অন্যদিকে, ভারত দাবি করছে, তারা যে উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে তা সফল হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের কাছে যথাযথ প্রমাণ আছে এবং সময়মতো সেটা প্রকাশ করা হবে।

বালাকোট হামলা নিয়ে এই যখন অবস্থা তখন ইতালীয় সাংবাদিক ফ্রান্সেসা মারিনোকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় গণমাধ্যম ফার্স্ট পোস্ট বলছে, হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৩৫টি লাশ সরিয়ে ফেলে। যার মধ্যে জইশ-ই-মোহাম্মাদের সদস্য, সাবেক পাক সেনাকর্তা এবং প্রশিক্ষণ নিতে আসা আত্মঘাতী সদস্যরা ছিল।

খবরে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষদর্শীরা মারিনোকে বলেন, ‘বোমাবর্ষণের পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু ততক্ষণে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। পুলিশকেও ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যারা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসেছিল, সেই স্বাস্থ্যকর্মীদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিল পাক সেনাবাহিনী।’

মারিনোর দাবি, ভারতীয় বোমার আঘাতে নিহত হয়েছে পাক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর এক প্রাক্তন অফিসার, যাকে কর্নেল সেলিম বলেই চিনতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গুরুতর আহত হয়েছে আর এক প্রাক্তন সেনাকর্তা কর্নেল জারার জাকরি। ভারতীয় বোমায় নিহত হয়েছে পেশোয়ার থেকে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে যাওয়া মুফতি মইন। এ ছাড়া মারা গেছে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ফেব্রিকেশনে অন্যতম সেরা বিশেষজ্ঞ উসমান গনিও।

মারিনো আরো দাবি করছেন, অত্যাধুনিক সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার দিয়ে তোলা ছবির মাধ্যমেই ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, জাব্বা টপের ঠিক নিচে পাহাড়ের গায়ে জইশের চারটি কাঠামো ধ্বংস করেছে ভারতীয় যুদ্ধবিমান। কিন্তু সেই ছবি এখনও সামনে আনেনি ভারত।

মারিনোর বরাত দিয়ে ফার্স্ট পোস্ট আরো বলছে, ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল, পুলওয়ামা হামলার পর পরই নিয়ন্ত্রণরেখার (আন্তর্জাতিক সীমান্ত) আশপাশের পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের বিভিন্ন শিবির থেকে সরে গিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে বালাকোটের জাব্বা টপের পাশের মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছিল জইশের সদস্যরা। ভারতের পাল্টা আঘাতের ভয়েই তারা স্থান বদল করে। কিন্তু ভারত যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে বোমাবর্ষণ করতে পারে, সেই ধারণা ছিল না জইশ-ই-মোহাম্মাদের সদস্যদের।