‘মা’ একটি মাত্র শব্দ। যার সাথে মিশে আছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা৷ সন্তানের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা না করেই মা সন্তানকে পরম যত্নে বড় করে তোলেন। পৃথিবীতে একমাত্র মা-ই জানেন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার কষ্ট আর আনন্দের অনুভূতির স্বাদ। প্রেগনেন্সি পিরিয়ডের সময়টুকু খুবই স্পর্শকাতর। এই সময় মায়েদের নিজেদের পাশাপাশি বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সাবধান থাকতে হয়। হবু মায়েদের জন্য রইলো কিছু পরামর্শ।

pregnancy

  • গর্ভাবস্থায় হরমোনের উচ্চ মাত্রার কারণে আপনি প্রথম কয়েক মাস ক্লান্তবোধ করতে পারেন। রাতে যদি ঘুম না হয়, তাহলে চেষ্টা করুন দিনের মাঝখানে একটু গড়িয়ে নিতে । তাও সম্ভব না হলে অন্তত পা দুটো সামান্য উঁচুতে তুলে ৩০ মিনিটের জন্য রিল্যাক্স হওয়ার চেষ্টা করুন।
  • গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হরমোন পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে তাঁদের অনেকেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। এ কথাটি স্বামীসহ পরিবারের সকলকেই মনে রাখতে হবে। হবু মাকে খুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে। শারীরিক এবং মানসিকভাবে মা সুস্থ থাকলে তার প্রভাব গর্ভে থাকা শিশুটির উপরও পড়ে।
  • সকালে উঠেই কুসুম গরম পানিতে গোসল সেরে নিন। তারপর পুরো শরীরে আস্তে আস্তে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন৷ অন্য তেলও অবশ্য মালিশ করা যেতে পারে, তবে অলিভ অয়েলে সন্তান জন্মের পর সাধারণত পেটে আর কোনো দাগ থকে না।
  • গর্ভকালীন সময়ে শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হবু মায়ের ত্বকেও দেখা দেয় নানা সমস্যা, বিশেষ করে মুখমণ্ডলে৷ তাই সপ্তাহে একবার ‘মাস্ক’ ব্যবহার করতে পারেন৷ যেমন একটি পাকা অ্যাভোকাডোর সাথে দু’চামচ ছানা মিশিয়ে চোখ ছাড়া পুরো মুখে লাগিয়ে দশ মিনিট পর গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন৷ তারপর ভালো কোনো ‘সানস্ক্রিন’ লাগিয়ে ফেলুন৷গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ভারী বোধ হয় তাঁর পা দুটো৷ রাতে যদি পা দুটোকে ভারী মনে হয়, তাহলে একটি বাটিতে ঠান্ডা পানি দিয়ে সামান্য লেবুর রস দিন৷ এরপর এতে ছোট টাওয়েল ভিজিয়ে পানিটা চিপে উঁচু করা পায়ে দুই মিনিট পেঁচিয়ে রাখুন।
  • সাধাণত গর্ভবতী মায়েদের মাথার চুল তেমনভাবে ঝরে না৷ তবে কারো কারো চুলের আগা শুকিয়ে যায়৷ তাই তাঁরা বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, এতে চুল নরম থাকে৷ তাছাড়া চুলকে সুন্দর ও ঝরঝরে রাখতে সপ্তাহে একদিন দুই টেবল চামচ অলিভ অয়েল, দুই চামচ টকদই এবং একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে মাথায় দিয়ে দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
  • গর্ভবতী মাকে দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে, তবে নরম ব্রাশ দিয়ে৷ এ সময় অনেকের মাড়ি নরম হয়ে রক্ত ঝরতে পারে৷ এছাড়া প্রথম ছয় মাস নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
  • এই সময়টাতে অনেকেরই সকালে বেশ খারাপ লাগে বা বমিভাব হয়৷ তাই এক কাপ চা পান করতে পারেন সাথে একটা টোস্ট বা বিস্কুট৷ এ সময় অনেকেই সকালে গরম নাস্তা পছন্দ করেন৷ আসলে নিজের যা ভালো লাগে সেটাই খাবেন। তবে লক্ষ্য রাখবেন, সেই খাবার যেন ফাইবার বা আঁশযুক্ত হয়৷ এছাড়া সঙ্গে অবশ্যই ফল খেতে ভুলবেন না।
  • একজন সুস্থ গর্ভবতীর দিনে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত৷ তাই মাঝে মাঝেই অল্প অল্প পানি পান করে নেবেন৷ এতে শরীরটা সারা দিন ঝরঝরে লাগবে এবং রক্ত ঘনও হয়ে যাবে না।
  • ঘরের মেঝেতে পা মুড়ে বসুন এবং হাতের তালু সামনে নিয়ে বুকের কাছে রাখুন। খুবই মনোযোগ দিয়ে আস্তে আস্তে গভীরভাবে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন এবং পেট থেকে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। কোনো গ্রুপের সাথে থেকে ব্যায়াম করতে পারলে আরো ভালো লাগবে৷ শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে এবং দুটোর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে এই বিশেষ সময়ে মুক্ত বাতাস সেবন খুবই জরুরি৷ হাঁটাহাঁটিও খুব ভালো।
  • পেটের সন্তানটি যেন ভালোভাবে বড় হতে পারে সেজন্য চাই যথেষ্ট সবুজ শাক-সবজি এবং আয়োডিন। আরো দরকার আয়রন এবং ক্যালসিয়াম৷ তাই এ সবের কোনোটারই যেন ঘাটতি না থাকে৷ সুতরাং শরীর আর মনের যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপ।

সন্তান জন্মানোর আগে থেকেই তার সঙ্গে বন্ডিং রাখা উচিত। ব্যাপারটা শুনতে একটু অদ্ভূত লাগলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণা এটিকে সত্যি বলে প্রমাণ করেছে। গর্ভাবস্থায় থাকা শিশুর প্রাথমিক প্রয়োজন হেলদি প্রেগন্যান্সি লাইফস্টাইল। নিয়ম করে চেক-আপ, হেলদি ফুড হ্যাবিট, প্রপার এক্সারসাইজ, মন ভাল রাখা- এই সবকিছুই ভাল থাকার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ।

তবে এটা পুরোপুরি হবু মায়ের ব্যাপার ভেবে নিলেই মুশকিল। বাবার ভূমিকাও এখানে খুবই জরুরি। প্রেগন্যান্সির প্রতিটি ধাপে স্ত্রীর সঙ্গে থাকা, তাঁর হাসিকান্না ভাগাভাগি করা ভাল বাবা হয়ে ওঠার প্রথম পাঠ। এছাড়াও নিজের লাইফস্টাইলে ছোটখাট পরিবর্তনও এক্ষেত্রে খুবই কার্যকর, যেমন স্মোকিং ছেড়ে দেয়া বা প্রেগন্যান্ট স্ত্রীর সামনে স্মোক না করা, স্ত্রীর সাথে বেশী সময় কাটানো সবই হবু সন্তানের উপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।

হবু সন্তানের কাছাকাছি হওয়ার আরও একটি সুন্দর উপায় হচ্ছে মিউজিক। মোটামুটি প্রেগন্যান্সির ৪-৫ মাস থেকেই গর্ভাবস্থায় থাকা শিশু শুনতে পায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ঘুমপাড়ানি গান, যন্ত্রসংগীত, হালকা ক্ল্যাসিকাল মিউজিক বাচ্চার খুব ভাল লাগে। এছাড়াও মা-বাবার গলার স্বর বা গাওয়া গান শিশুর মনে গেঁথে যায়।

যে দিন থেকে জানতে পারবেন আপনি প্রেগন্যান্ট, বাচ্চার সাথে কথা বলা শুরু করুন। বাচ্চার সঙ্গে বন্ডিংয়ের প্রথম ধাপ এটাই। বাচ্চা বেশ খানিকটা বড় হয়ে উঠলে পেটে হাত দিয়ে দুজনে মিলে ওর পজিশন বোঝার চেষ্টা করুন। ও পা ছুঁড়লে , আপনি আলতোভাবে সেই জায়গাটা ঠেলে দিন। এই আদান-প্রদান আপনাদের সম্পর্ককে মজবুত ভিত দেবে।

প্রেগন্যান্সির এই বিশেষ দিনগুলো স্মরণীয় করে রাখতে নিজস্ব প্রেগন্যান্সি জার্নাল লেখা শুরু করতে পারেন। প্রতি সপ্তাহে শরীর, মনে নানা পরিবর্তন, বিভিন্ন অনুভূতি, স্বামী এবং পরিবারের অন্যদের মজার মন্তব্য সবই সুন্দর করে লিপিবদ্ধ করে রাখবে এই জার্নাল।

এই জার্নালেই গেঁথে রাখতে পারেন বিভিন্ন সময়ের ইউএসজি রিপোর্টের প্রিন্টআউট, প্রেগন্যান্সির বিভিন্ন স্টেজে আপনাদের ছবি, বড় ভাই বা বোনের আঁকা ছবির মতো ছোট্ট ছোট্ট স্মারক। শিশু বড় হয়ে উঠে নিজেই পড়ে জানতে পারবে আপনারা দুজনে ঠিক কতটা ভালবেসে ওকে এই পৃথিবীতে এনেছেন।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

সুস্থ ও সতেজ থাকার জন্যে হোল গ্রেন ফুড

পুষ্টিকর খাবার স্প্রাউটস

নানা রকম ডালের গুনাগুন

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.