সন্তানের জন্য দুধ চুরি, নিরুপায় বাবাকে বেদম প্রহার

কথায় আছে, 'মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়, পিতৃস্নেহের কাছে হয়েছে মরণের পরাজয়’। সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা এমনই স্বার্থহীন যে, সন্তানের জন্য নিজের প্রাণও দিতে দু'বার ভাববেন না কোন বাবা। সম্রাট বাবর জীবনের বিনিময়ে অসুস্থ পুত্র হুমায়ুনকে বাঁচাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। পিতৃস্নেহের এমন একটি ঘটনাই তুলে ধরা হবে আজ।

'স্যার, তিনমাস হল চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।' কথাগুলো এক অসহায় এক বাবার। দুধ কেনার টাকা না থাকায় বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করতে গিয়ে বেদম প্রহারের শিকার হয়েছেন এই বাবা।

হৃদয় বিদারক এই ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে খিলগাঁও-এর শহীদ বাকী সড়কের পাসে একটি সুপার শপে। আনুমানিক ২৫-৩০ বছরের এক লোক স্বপ্ন নামের একটি সুপার শপ থেকে বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট চুরি করতে পালাতে গিয়ে কতর্ব্যরত গার্ডদের হাতে ধরা পড়েন। এরপর তাকে বেদম প্রহার করা হয়।

ঠিক এই সময় ওই এলাকায় সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এই ঘটনার বিবরণও দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার রাতে দ্বায়িত্বপালনরত অবস্থায় তিনি হঠাৎ একটি জায়গায় মানুষের হট্টগেোল দেখতে পান। পরে ঘটনা জানার জন্য তিনি একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠান। পরে ২৫-৩০ বছরের এক লোককে টেনে হিচড়ে তার সামনে নিয়ে আসা হয়।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ''গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট, বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম।

একজন বললো, 'স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল'। পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বললো, 'স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল।'

আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'কি চুরি করেছে?' সিকিউরিটি গার্ড বললো, 'স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল'। আমার খটকা লাগলো,আমি জিজ্ঞেস করলাম 'দুধ'? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, 'স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট। আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল। তারপর বললো, স্যার, তিনমাস হল চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।'

সাথে সাথেই নিজের সন্তানদের কথা মনে পড়ে গেল পুলিশ অফিসার জাহিদুল ইসলামের। সেই বাবার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে ভাবতে থাকলেন কতটা অসহায় হলে কেউ এমন কাজ করতে পারে। পরে অবশ্য নিজেই সেই দুধের টাকা পরিশোধ করেন তিনি।

ফেসবুক স্ট্যটাসে তিনি লেখেন, 'সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল!! মনে হল কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে!! ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই কাজ করতাম। সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বললো, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।'

তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের অনেক মানুষ বেকারত্বের অভিশাপে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এক অসহায় বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করছে। ভালো চাকরি থাকায় হয়তো আমি ভালো আছি কিন্তু সমাজের কত মানুষ আজ এই বাবার মত অসহায়।' ফেসবুকে দেয়া পোস্টে তিনি প্রশ্ন রেখে গেলেন, এর দায়ভার কার?