হাতি-শাবকের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে যুবক নিহত

ভোরের আলো তখন ফুটছে মাত্র। জঙ্গলের কাছে ধান খেতে তখন হাতিদের ব্যস্ততা। তড়িঘড়ি ধান খেয়ে অন্ধকার অন্ধকার থাকতেই হারিয়ে যেতে হবে জঙ্গলে। কিন্তু আচমকাই একটি হাতি শাবক প্রসব করে ধানক্ষেতের ধারে। সেখান থেকে জঙ্গল আধা-কিলোমিটার। আলো ফুটতেই ধীরে ধীরে জঙ্গলমুখী হয় হাতির দলটি।

তবে শাবককে শুঁড়ে তুলে নিয়ে যেতে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে মা হাতিটি। ততক্ষণে হাতির বাচ্চা দেখতে দলে দলে ছুটে আসছে গ্রামবাসী। তাদের তাড়া খেয়ে শেষমেষ আর শাবককে জঙ্গলে ফেরানো সম্ভব হয়নি মায়ের। সেখানেই মারা যায় শাবকটি। পরে শোকার্ত মা শুঁড়ে জড়িয়ে পিষে দেয় এক গ্রামবাসীকে।

দ্য ওয়াল বলছে, ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের লালগড় ব্লকের ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অজানাশোল গ্রামে।

বাসিন্দারা জানান, ধান পেকেছে, তাই গত তিন চারদিন ধরে একটি হাতির পাল রাত হলেই হানা দিচ্ছে ফসলের ক্ষেতে। পালে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি হাতি রয়েছে বলেও জানান তারা। এই পালের একটি হাতিই আজ শুক্রবার ভোরে ধানক্ষেতে শাবক প্রসব করে। সেই শাবককে নিয়ে জঙ্গলে ফেরার চেষ্টা করে দলটি। আধা কিলোমিটারের মধ্যেই জঙ্গল।

হাতির দলের সঙ্গেই শাবককে নিয়ে এগোতে থাকে মা। কিন্তু অজানাশোল খালের কাছে একটি বাঁধে আটকে পড়ে তারা। শাবককে কিছুতেই সেই জায়গা পার করাতে পারেনি মা হাতিটি। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ সেখানেই মারা যায় শাবকটি। মা হাতি তাকে রেখে জঙ্গলে ফিরতেই ধুম পড়ে যায় সদ্য মৃত শাবকটির সঙ্গে সেলফি তোলার।

খবরে বলা হয়েছে, লোকজন যখন সেলফি তোলায় ব্যস্ত, সে সময় আচমকাই মা হাতি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে শুঁড় দিয়ে জড়িয়ে পিষে মারে শৈলেন মাহাত (৩৩) নামে এক যুবককে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় বন দফতরের কর্মীরা। সেইসঙ্গে ঘটনাস্থলে যায় লালগড় থানার পুলিশ।

প্রাক্তন বনকর্তা ও হস্তি বিশেষজ্ঞ সমীর মজুমদার জানান, সাধারণভাবে এমন খোলা জায়গায় নয়, বনের গভীরে শাবক প্রসব করে হাতি। যেখানে হাতি শাবক প্রসব করে, সেখানে অন্তত দুই থেকে তিনদিন থাকে। মা ও শাবক যাতে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে তার জন্যই হাতির দলে এমন নিয়ম। কিন্তু আজ ঘটনাটি ঘটেছে একেবারে দুর্ঘটনাবশতঃ। এবং মানুষ দলে দলে ছুটে না এলে হয়তো পরিস্থিতি এমন হতো না। হয়তো বেঁচে যেত শাবকটি। দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু হতো না ওই গ্রামবাসীরও।