'সরকার তিন মেয়াদেও প্রশ্নফাঁস বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, 'বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদেও প্রশ্নফাঁস বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।' সরকারের তিন মেয়াদেও প্রশ্নফাঁসকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাকে দুর্বল শাসন ব্যবস্থা এবং সুশাসনের অভাব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রোববার দুপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রতিবাদে এবং পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এই মানববন্ধনে এসব কথা বলেন ডাকসুর ভিপি ও সংগঠনটি যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর।

নুর বলেন, 'প্রশ্নফাঁস নিয়ে এটাই আমাদের প্রথম কিংবা নতুন আন্দোলন নয়, আমাদের আগেও অনেক ছাত্রসংগঠনও প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু শুরু থেকেই প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। সুশাসনের অভাবেই মেধাবীরা আজ চাকরি পাচ্ছে না।'

বগুড়ায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ইফতার পণ্ড ও তার ওপর হামলার বিষয়ে নুর বলেন, 'স্বৈরশাসক ইয়াহিয়ার শাসনামলে যেভাবে তাদের ছাত্র সংগঠন এনএসএফ বাঙালি ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে আজ ছাত্রলীগ সেভাবে সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আপনারা দেখেছেন বগুড়ায় কীভাবে 'জঙ্গি স্টাইলে' আমিসহ সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোন বিচার হয়নি। আজ ন্যায় বিচার ক্ষমতাসীনদের পকেটে বন্দী।'

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক নেতা ও সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন বলেন, 'বাংলাদেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতি হচ্ছে। এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হচ্ছে, এমনকি প্রশ্নফাঁস থেকে মুক্তি পাচ্ছে না প্রাইমারি ও হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরাও।'

তিনি অভিযোগ করেন, 'আজ নিয়োগ পরীক্ষাগুলো স্বচ্ছ পদ্ধতিতে নেয়া হচ্ছে না। এখানে প্রশ্নফাঁস, ডিজিটাল জালিয়াতি, লবিং, ঘুষ প্রদান ইত্যাদি ঘটনা ঘটছে। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরাও যদি জালিয়াতি ও প্রশ্নফাঁস করে শিক্ষক হয়, তবে এই জাতির কি করুণ দশা, তা কল্পনা করে দেখেন।'

সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, 'আজকে প্রশ্নফাঁসে জর্জরিত হয়ে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।' দেশের সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের একত্রিত হয়ে প্রশ্নফাঁসকারীদের রুখে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রশ্নফাঁসবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মো তারেক রহমান বলেন, 'সরকার প্রশ্নফাঁস রোধে পুরোপুরি ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা থেমে যাব না, আমরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছি, পাশাপাশি আইনী পথেও হাঁটছি, আমরা আদালতে রিট করার উদ্যোগ নিয়েছি। ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পরীক্ষা কোনভাবেই মেনে নেব না।' মানববন্ধনের সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসান আল মামুন প্রশ্নফাঁস নিরসনে কার্যকর ভুমিকা নেয়ার আহ্বান জানান।

মানববন্ধন থেকে ৩ টি দাবি তুলে ধরা হয়:
১. প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দুই ধাপের পরীক্ষা বাতিল করা।
২. প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা।
৩. প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের সরকারি চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণা করা।

মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন ভুক্তভোগী ও সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামীন মোল্লা, মাহফুজ খান, সুহেল ইসলাম, মশিউর রহমান, তারেক রহমান, আরিফ ইসলাম, আতাউল্লাহ খান, লুৎফুন্নাহার লুমা, সোহরাব হোসেনসহ আরো অনেকে।