ইংল্যান্ড নয়, ভাগ্যের কাছে হারল নিউজিল্যান্ড

অবিশ্বাস্য, অভুতপূর্ব, অভাবনীয়, অনুনমেয়, অতুলনীয় কিংবা অকল্পনীয়। রবিরাতে লর্ডসের ফাইনাল যে রোমাঞ্চ উপহার দিয়েছে সেটার বিশেষণ হতে পারে এ রকম অনেককিছুই। ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল যে মহানাটকে শেষ হবে সেটা ছিল ভাবনারও বাইরে। স্নায়ুঠাসা সেই লড়াইয়ে ইংল্যান্ড জিতেছে আইসিসির অদ্ভুত এক নিয়মে।

টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে আট উইকেটে ২৪১ রানের লড়াকু পুঁজি তুলেছে নিউজিল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে ২৪১ রানে গুটিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। ম্যাচ টাই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম কোনো ফাইনাল গড়াল সুপার ওভারে। সুপার ওভারেও অবিশ্বাস্য সমতা। ১৫ রান তুললো দুই দলই।

কিন্তু পুরো ম্যাচে বেশি বাউন্ডারির কারণে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় ইংল্যান্ডকে। সুপার ওভারসহ ম্যাচে ২৬টি বাউন্ডারি মেরেছেন বাটলার-স্টোকসরা। নিউজিল্যান্ডের বাউন্ডারি সংখ্যা সেখানে ১৭টি। অথচ ম্যাচটা শেষ হতে পারতো সুপার ওভারের আগেই। চ্যাম্পিয়ন হতে পারতো রাগবির দেশটি।

পুরো আসরে ভাগ্যের ছোঁয়া পাওয়া নিউজিল্যান্ড ফাইনালে হলো ভাগ্যবিমুখ। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের ইনিংসের শেষ দিকে। ইংলিশদের শেষ তিন বলে যখন নয় রান লাগতো তখনই ভাগ্য বিদ্রুপ করে কিউইদের সঙ্গে। শেষ ওভারের চতুর্থ বলে ইয়র্কার লেংথের বলে স্টোকসদের যেখানে দুই রান নেওয়াই কঠিন ছিল সেখানে হয়েছে ছয় রান!

বাউন্ডারি থেকে করা গাপটিলের থ্রো উইকেটকিপার লাথামের গ্লাভসে পৌঁছানোর আগেই স্টোকসের ব্যাটে লেগে বল পার হয়ে যায় সীমানা। ইংলিশরা পায় অতিরিক্ত চার রান। ভাগ্য বিমুখ না হলে শেষ ওভারে অমন দুর্ভাগ্যের শিকার হতো না নিউজিল্যান্ড। শেষ দুই বলে দুই রানের পুঁজি থাকারও পরও চাপে ভেঙে পরেনি কিউইরা।

শেষ দুই বলে দুটি রান আউট করেছে তারা। অথচ সুপার ওভারের শেষ বলে দুই রান নিতে গিয়ে ঠিকই রান আউট হয়ে গেলেন মার্টিন গাপটিল। কয়েক ইঞ্চির দূরত্বটা পাড়ি দিতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতো কিউইরা। ম্যাচটা সুপার ওভারে আসার আগেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে জীবন পেয়েছেন ম্যাচের নায়ক স্টোকস।

নিশামের বলে লং অনে উড়িয়ে মেরেছিলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। ক্যাচটাও ঠিকঠাক ধরেছিলেন বোল্ট। কিন্তু ওই সময়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। ক্যাচ নিয়েই পা দিয়ে ফেলেন সীমানা দড়িতে! আউট হওয়ার বদলে স্টোকস পেয়ে গেলেন ছয়টি রান! এরপর শেষ ওভারে ইংলিশরা ভাগ্যবশত পেল আরো চারটি রান।

দুর্ভাগ্যের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হলো নিউজিল্যান্ডের। শুধু দুর্ভাগ্য নয়, বাজে আম্পায়ারিংয়েরও শিকার হয়েছে তারা। রস টেলর এলবি না হয়েও আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তের বলি হয়েছেন। রিভিউ না থাকায় আউট হতে হলো টেলরকে।

এনিয়ে পরপর দুটি ফাইনাল হারল কিউইরা। এমন অভিজ্ঞতা এর আগে শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের হয়েছিল। ইংলিশরা ১৯৮৭ ও ১৯৯২ সালে এবং লঙ্কানরা ২০০৭ ও ২০১১ আসরে ফাইনালে হেরেছিল। টুর্নামেন্টজুড়ে ভাগ্যের সহায়তা পাওয়া নিউজিল্যান্ড শেষ ম্যাচে হতাশ হলো। আসরজুড়ে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করা কিইউরা ফাইনালে এভাবে কান্নাভেজা চোখ নিয়ে মাঠ ছাড়বে সেটা ছিল ভাবনারও বাইরে।