বেন স্টোকসের শাপমোচন

খুব বেশি বছর আগের কথা নয়। ৩ এপ্রিল, ২০১৬। সেদিন ইডেন গার্ডেন্সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ ওভারে ১৮ রান আগলে রাখার চ্যালেঞ্জ ছিল বেন স্টোকসের কাছে। কিন্তু কলকাতার ফাইনালে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচটা জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্টোকসের চার বলে চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে দুই বল বাকি থাকতেই ক্যারিবীয়দের রূপকথার জয় উপহার দেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট।

সময়ের বিবর্তনে কাল রাতে লন্ডনে ইংল্যান্ড স্বপ্ন দেখেছিল সেই স্টোকসের চোখেই। এবার বোলার নয়, ইংলিশ অলরাউন্ডার ব্যাটসম্যানের ভূমিকায়। আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম শিরোপা জন্য শেষ ওভারে ১৫ রানের সমীকরণ ছিল স্টোকসের কাছে। শেষ দুই বলে রান আউটের পর স্বাগতিকরা নিতে পারল ১৪ রান। ম্যাচ টাই। ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড দুই দলের সংগ্রহ ২৪১!

লর্ডসের ফাইনালে অনেক আগেই হেরে যেতে পারতো ইংল্যান্ড। ৮৬ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল স্বাগতিকরা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে জস বাটলারকে নিয়ে ১১০ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসে ইংলিশরা। 

অনেক চড়াই-উৎড়াইয়ের পর দুই বলে তিন রানের সমীকরণ তাদের সামনে। কিন্তু ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেও কাজ শেষ হলো না ইংলিশ অলরাউন্ডারের। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে  ম্যাচটা টাই হয়। মহানাটকীয় ফাইনালে সুপার ওভারও হলো টাই! দুই দলই তুলতে পারল সমান ১৫ রান। নিয়ম অনুযায়ী পুরো ম্যাচে বাউন্ডারি বেশি মারায় চ্যাম্পিয়ন হলো ইংল্যান্ড।

ইংলিশদের স্বপ্নপূরণ ও ফাইনালে সাহসিক ব্যাটিংয়ের সুবাদে স্টোকস হলেন ম্যাচ সেরা। শাপমোচন করলেন তিন বছর আগের ফাইনালের। অথচ স্টোকসের বিশ্বকাপে খেলারই কথা ছিল না। ২০১৭ সালে ব্রিস্টলের এক পানশালায় মারপিট করে আজীবন নিষেধাজ্ঞার শঙ্কায় পড়েছিলেন তিনি। বাদ পড়েছিলেন জাতীয় দল থেকে।

এমনকি মর্যাদা অ্যাশেজ সিরিজে পর্যন্ত খেলতে পারেননি স্টোকস। নির্বাসন কাটিয়ে জাতীয় দলে ফিরলেও কদিন পরপরই আদালতের যেতে হয়েছে তাকে। স্টোকস ভালোভাবেই ফিরে এসেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তার ফেরাটা হলো মনে রাখার মতো। ইংল্যান্ডকে শিরোপা জিতিয়েই সব পাপের প্রায়শ্চিত্ত করলেন স্টোকস।

দল চ্যাম্পিয়ন হলেও অবিশ্বাসের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। কাল থ্রিলার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ শেষে পুরস্কার নিতে এসে স্টোকস বলেছেন, 'আমি ভাষাহীন। চার বছর ধরে আমরা এই মুহূর্তটা পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করেছি। সেটি এমনভাবেই এলো! অবিশ্বাস্য। আমার মনে হয় ক্রিকেট ইতিহাসে আর কখনো এমন ম্যাচ হবে।'

সম্ভবত ঠিকই বলেছেন স্টোকস। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রায় দেড় শ বছরে এমন দম বন্ধ করা উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ আর দেখেনি দর্শকরা। নিজেকে প্রমাণের জন্য এরচেয়ে সেরা মঞ্চ আর পেতে পারতেন না স্টোকস। দায় মুক্ত করে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের নতুন সূর্যোদয় হলো তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে।