পরিকল্পনা ছিল 'হালকা' মারধর, কিন্তু...

বরগুনায় বহুল আলোচিত রিফাত হত্যাকাণ্ডে মামলার এক নম্বর আসামী ও নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির সংশ্লিষ্টতা মিলেছে এটা পুরনো খবর। নতুন খবর হচ্ছে, স্বামী রিফাত হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনায় নয়ন বন্ডের সঙ্গে ছিলেন মিন্নি। তবে পরিকল্পনা ছিলো, স্বামী রিফাত শরীফকে হালকা মারধর দিয়ে শুধু শাসানো হবে। কিন্তু ঘটনার দিন পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে খুন করা হয় রিফাতকে।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে বুধবার তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যায় স্ত্রী মিন্নি সরাসরি জড়িত বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয় বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনা জেলা পুলিশের এক সদস্য জানান, মূলত রিফাতকে হত্যার কোন পরিকল্পনাই ছিল না। রিফাতকে হালকা মারধর দিয়ে শাসানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফের প্রাণ নেয়া হয়।

জানা গেছে, গত ২৬ জুন বুধবার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার দুদিন আগে সোমবার স্থানীয় হেলাল নামে এক ছেলের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় রিফাত শরীফ। যে হেলাল হচ্ছেন নয়ন বন্ডের 'কাছের' বন্ধু।

সেই মোবাইল ফোনকে নিয়েই ঘটনা এগুতে থাকে। পরে সেই মোবাইল উদ্ধারের জন্য নয়ন বন্ড তার 'বান্ধবি/প্রেমিকা' মিন্নির দারস্থ হন। এরপর মিন্নি রিফাতের কাছ থেকে ফোনটি উদ্ধারও করেন। কিন্তু ওই ফোনটি উদ্ধার করতে গিয়ে রিফাত শরীফের কাছে মার খান মিন্নি। যা থেকে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন মিন্নি। এরপর হত্যাকাণ্ডের একদিন আগে মঙ্গলবার নয়নের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করে মোবাইলটি ফেরত দেন মিন্নি।

একই সঙ্গে মিন্নি তার স্বামী কর্তৃক মারধরের বিষয়টি নয়নকে অবহিত করেন। মূলত মার খেয়ে রিফাতের ওপর ক্ষেপে যান মিন্নি। এরপর রিফাতকে শাসানোর পরিকল্পনা করেন তারা। তবে মিন্নি শর্ত দেন মারধরের সময় নয়ন যেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকেন। এরপর মিন্নির কথা মতো নয়ন বন্ডের নেতৃত্ব ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় বরগুনা কলেজ মাঠে মিটিংও করা হয়।

জেলা পুলিশের ওই সদস্য আরো বলেন, হামলার আগে রিফাত শরীফ এবং মিন্নি কলেজ থেকে বের হলে পরিকল্পনা মাফিক কলেজের সামনে রিফাতকে মারধরের কোন প্রস্তুতি দেখা যায়নি। ফলে সময় ক্ষেপণের জন্য রিফাত শরীফকে নিয়ে ফের কলেজে প্রবেশ করেন মিন্নি। এরপরই বন্ড বাহিনীর কয়েকজন সদস্য এক হয়ে রিফাত শরীফকে আক্রমণ করেন। এ সময় মিন্নিকে খুব স্বাভাবিক দেখা গেছে (ভিডিও ফুটেজ)।

জানা গেছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফাতকে শুধুমাত্র হালকা মারধর করে শাসানো হবে ভেবেই স্বাভাবিক ছিলেন মিন্নি। সিসিটিভি ফুটেজে যার সত্যতা মিলেছে। তবে পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে যখন নয়ন বন্ড এবং রিশান ফারাজি রিফাতকে কোপাতে শুরু করেন তখন বিচলিত হয়ে ছুটোছুটি করেন মিন্নি।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২ জুলাই ভোররাতে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ সাত আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে মিন্নিসহ সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।