ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন!

চলতি বছর আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলার হাসপাতালগুলোতে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন অনেকে। তাই চরম আতঙ্ক নিয়ে জীবন যাপন করছেন দেশের সকল মানুষ। তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরসহ আরও কয়েকটি দেশে বর্তমানে ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। 

মশাবাহিত এ ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধে নেই কোন উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা। তবে কোনো ভ্যাকসিনও যে নেই, তা কিন্তু নয়। ডেংভেক্সিয়া নামের একটি ভ্যাকসিনের খোঁজ পাওয়া যায়, যেটি ডেঙ্গু জ্বর নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এই ভ্যাকসিনের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, শুধুমাত্র ৯ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের শরীরেই এটি কাজ করবে। তবে পৃথিবীর সব দেশে এর অনুমোদন নেই।

এদিকে গত ১ মে প্রথমবারের মতো এ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। সম্প্রতি বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করায় অনেকেই শেয়ার করছেন এ তথ্যটি। তবে বাংলাদেশ, ভারতসহ এশিয়ার ডেঙ্গু আক্রান্ত অন্যান্য দেশগুলোতে এ ভ্যাকসিন কবে আসবে বা অনুমোদন পাবে তা জানা যায়নি। ইতোমধ্যে পৃথিবীর ২০টি দেশে এ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং ১০টি দেশে এটি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে মশাবাহিত একটি ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এডিস মশার কামড়ে মানুষ এ জ্বরে আক্রান্ত হয়। গত কয়েক দশকে এ জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে।

এতদিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরের কোন চিকিৎসা ছিল না উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডেপুটি কমিশনার আন্না আব্রাহাম বলেন, তারা দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে মিলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করছেন। অনুমোদনপ্রাপ্ত এ নতুন ভ্যাকসিনটি আমেরিকার বেশ কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, সারাবিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোর মানুষরা এই জ্বরে বেশি আক্রান্ত হন। তবে শুরুতেই এর কোন লক্ষণ বোঝা না যাওয়ায় অনেকেই এটিকে সাধারণ ভাইরাস জ্বর ভেবে থাকেন। এ কারণে ডেঙ্গু পরবর্তীতে মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ কেন্দ্র আরও জানায়, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ প্রতি বছর এ জ্বরে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে মারাত্মক অবস্থার মধ্য দিয়ে যান পাঁচ লাখ রোগী এবং মারা যান ২০ হাজার। এ জ্বরের উপসর্গগুলো হলো- পেট ব্যথা, রক্তপাত, বমি বা বমিভাব, শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা ইত্যাদি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বায়োলজিক্স ইভালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক পিটার মার্কস বলেন, যে কোন এক ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর মানুষের শরীর ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। কিন্তু একই ব্যাক্তি যদি এক প্রকারের ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর পরবর্তীতে বাকি তিন টাইপের ডেঙ্গু ভাইরাসের যেকোন একটিতে আক্রান্ত হন, তাহলে তারা শারীরিক অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়। এমনকি তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে নতুন এই ভ্যাকসিনটি মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে আনবে।

ভ্যাকসিন কাদের জন্য প্রযোজ্য

পিটার মার্কস বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস প্রতিরোধকারী এ ভ্যাকসিনটি মোট ৩৫ হাজার রোগীর ওপর পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এতে পূর্বে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯ থেকে ১৬ বছর বয়সী প্রায় ৭৬ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন আর কাজ করে না।

এছাড়া যাদের আগে কখনো ডেঙ্গু হয়নি তারা এই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করলে মাথা ব্যথা, জয়েন্ট ও পেশিতে ব্যথা, সামান্য জ্বর এবং ক্লান্তির মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। তাই শুধুমাত্র ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরাই এই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করতে পারবেন।

যেসব দেশে ভ্যাকসিনটি পাওয়া যায়

১৯২৯ সালে এই ভ্যাকসিনের আবিষ্কার হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে চিকিৎসকদের মনে সন্দেহ ছিলো। তাই ২০১৬ সালের আগে কোনো দেশই ভ্যাকসিনটিকে অনুমোদন দেয়নি।

২০১৬ সালে এসে ১১টি দেশ ভ্যাকসিনটিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার ও বিক্রি করার অনুমোদন দেয়। দেশগুলো হলো- মেক্সিকো, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, এল সেলভাডোর, কোস্টারিকা, প্যারাগুয়ে, গুয়েতেমালা, পেরু, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ফিলিপাইনে এই ভ্যাকসিন ব্যবহারে ১৩০ জন শিশু মারা যাওয়ায় দেশটিতে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও নিহতের সংখ্যা ও কারণ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।