পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ককশিট ও পলিথিনের কারণে খুলনা মহানগরীতে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আর এতে ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ।

khulna palibag

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলায় কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে প্রতিটি দোকানেই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ককশিটের তৈরি ওয়ান টাইম প্লেট গ্লাসও ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহারের পর পলিথিন ও ককশিট নগরীর নালা-নর্দমায় ফেলা হচ্ছে। খাল বা নর্দমায় এসব পলিথিন পানির নিচের স্তরের পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। অপরদিকে ককশিট নালা, নর্দমা ও ডোবায় পানির ওপরের স্তরে ভেসে থাকে। যা পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। আর এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ও অপচনশীল এসব পণ্য উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই প্রশাসনের। তবে মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু পলিথিন জব্দ করা হলেও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন উৎপাদন কারখানা বন্ধের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

অপরদিকে ককশিটের ব্যবহারও বেড়েছে বিপজ্জনকভাবে। চীন জাপান থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত ককশিটের কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ককশিট’র প্যাকেট ও প্লেন শিট। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সাচিবুনিয়ায় রয়েছে ককশিট তৈরির কারখানা। একটি ককশিট বিক্রি হচ্ছে ১৫০-৩৫০ টাকায়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-সচিব সাইফুর রহমান খান বলেন, ককশিটের তৈরি গ্লাস, প্লেটসহ বিভিন্ন পণ্য ওয়ান টাইম ব্যবহার করা হয়। এর ক্ষতিকর দিক ভয়াবহ। এছাড়া এগুলো পচনও ধরে না। সুতরাং এটা পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকারক। অপরদিকে পলিথিন নিষিদ্ধ। পরিবেশের জন্য হুমকি এ পলিথিন অসাধু ব্যবসায়ীরা গোপনে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। প্রতিনিয়ত অভিযান চললেও পলিথিনের বিস্তার থামানো যাচ্ছে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০০১ সালে ২০ মাইক্রোন (পুরুত্বের একক) এর নিচে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং বাজারজাত নিষিদ্ধ করে। কিন্তু বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ব্যবহারের কথা বলে ২০০৮ সালে নতুন আদেশ জারি করা হয়। যাতে ৫৫ মাইক্রোন এর নিচে পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ব্যাগ আকৃতির যেকোনো পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ রাখা হয়।

কিন্তু দেশে গার্মেন্টস, লবণ ও চিনিসহ ২৩ ধরনের পণ্য প্যাকেজিংয়ে মোটা পলিথিন ব্যবহারের অনুমোদনকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পাতলা নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন করছে।

খুচরা ব্যবসায়ী মো. আরমান, শেখ ইমরান ও মো. জহির জানান, পলিথিন কারখানা মালিকদের শক্ত নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্কই দেশব্যাপী পলিথিন সরবরাহ করছে। বড় বাজার ও দৌলতপুর বাজারে গড়ে উঠা সংঘবদ্ধ একটি চক্র পলিথিন সংরক্ষণ এবং বাজারজাত করছে। চক্রটি নমুনা হিসেবে একটি বা দুটি পলিথিন সাথে নিয়ে গোপনে দোকানে রাখে। ক্রেতাদের নমুনা দেখিয়ে পলিথিন বিক্রি করে। পরে রাতের আঁধারে গোডাউন থেকে এ সব পলিথিন সরবরাহ হয় খুলনার বিভিন্ন স্থানে।

রূপসা মাছের আড়তের ককশিট ব্যবসায়ী আরমান মিয়া বলেন, যারা বিদেশ থেকে মাছ এবং ফল আনেন তাদের থেকে এ সকল ককশিট আমরা কিনে নেই। পরবর্তীতে যারা মাছ কিনেন তারা এখান থেকে এ সকল ককশিট কিনে নেন। একটি ককশিট ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে কাজ শেষে যে সকল ককশিট ফুটা হয় বা ভেঙে যায় তখন তা ফেলে দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, এসব ককশিট ১০০-১৫০ বছরেও পচে না। এগুলো পানির ওপর ভেসে থাকে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) কনজারভেটিভ অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য পলিথিনের থেকেও ভয়াবহ হচ্ছে ককশিট। এগুলো পানির ওপর ভেসে থাকে। আর পলিথিন পানির নিচের স্তরে থাকে। পলিথিন বিভিন্ন স্থানে পানির সাথে প্রবাহিত ময়লা আটকে রাখে পানির নিচে। আর ককশিট পানির ওপরের অংশের পানি প্রবাহকে ময়লাসহ আটকে দেয়। এ কারণেই জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেয়। এ থেকে উত্তরণে নিয়মিত অভিযান চলছে। পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ইউএনবি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.