সেই স্টোকসেই ইংল্যান্ডের আরেক ইতিহাস

চতুর্থ ইনিংসে ৩৫৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা কঠিন তো বটেই, ক্রিকেটীয় ভাষায় এক প্রকার অবিশ্বাস্য। কারণ টেস্ট ক্রিকেটে প্রায় দেড় শ বছরের ইতিহাসে সাড়ে তিন শোর্ধ্ব রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে হাতে গোনা কয়েকটা। হেডিংলি টেস্টে ইংল্যান্ডকে সেই চ্যালেঞ্জটা ছুড়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাব দিতে নেমে অবিশ্বাস্যভাবে এই চ্যালেঞ্জ টপকে ইতিহাস গড়ল ইংলিশরা।

আজ লিডসে তৃতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ২০৩ রান। অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল সাত উইকেট। তন্মধ্যে ছয়টি তুলে নিয়েছিল অজিরা। কিন্তু ইংলিশদের দশম ও শেষ উইকেটটি নিতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। দশম উইকেটে রুট-লিচের ৭৬ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটির সুবাদে থ্রিলার টেস্টে জিতল ইংল্যান্ড। এক উইকেটের মহানাটকীয় এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা ফিরল ইংলিশরা।

ইংল্যান্ডের ইতিহাস গড়া এই জয়েরও নায়ক সেই বেন স্টোকস। যার ব্যাটিং দৃঢ়তায় গত মাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংলিশরা। আজ অপরাজিত ১৩৫ রানের রাজসিক ইনিংসের সুবাদে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জিতল ইংলিশরা। ২১৯ বলের ইনিংসে ১১টি চার ও ৮টি ছক্কা মেরেছেন রূপকথার নায়ক স্টোকস। রেকর্ড জয়ে অবদান আছে জো রুটের ৭৭, জো ডেনলির ৫০ ও জনি বেয়ারস্টোর ৩৬ রানের ইনিংসগুলোরও।

রোববার সকালে ছয় উইকেটে ১৭১ রানে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে ইংল্যান্ড। আগের দিন আশার প্রদীপ জ্বালানো ইংল্যান্ড অধিনায়ক সাজঘরে ফিরে গেলেন মাত্র দুই রান যোগ করে। ৭৭ রানে রুট আউট হতেই ম্যাচের নাটাই নিজেদের হাতে তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। যদিও একটু পরই ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। পঞ্চম উইকেট জুটিতে বেয়ারস্টোকে নিয়ে স্টোকস যোগ করেন ৮৬ রান।

বেয়ারস্টো সাজঘরে ফিরতেই ধাক্কায় খায় ইংল্যান্ড। দ্রুত উইকেট নিতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে রেখে যেন চিত্রনাট্য সাজাচ্ছিলেন স্টোকস। গল্পটা তৈরি করলেন কল্পনার মতো করেই। আর তা না হলে ২৮৬ রানে নয় উইকেট হারানোরও কেউ স্বপ্ন দেখে! জয় যেখানে আলোকবর্শ দূরে। এখান থেকে জয়ের আশা করা স্রেফ দিবাস্বপ্ন। স্টোকস সেটাই বাস্তবে করে দেখালেন। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন তিনি। চার-ছক্কার বৃষ্টি ঝরান ইংলিশ অলরাউন্ডার। অন্য প্রান্তে জ্যাক লিচ যোগ্য সঙ্গটাই দিয়েছেন তাকে। এক রানে অজেয় ছিলেন লিচ।

কিন্তু লিচের এই ইনিংসটার মাহাত্ম্য রান দিয়ে বোঝানো অসম্ভব। এদিন যে উইকেটে এক ঘণ্টা মাটি কামড়ে ছিলেন লিচ! বল খেলেছিলেন ১৭টি। স্টোকস-লিচ শেষ উইকেটের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে করেছেন ৭৬ রান। যেখানে স্টোকসেরই ৭৪! অথচ এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে তার চেয়েও কম রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। অল আউট হয়েছিল ৬৭ রানে! সেখান থেকে ফিরে এসে ইংলিশরা যেভাবে হেডিংলি টেস্টে প্রত্যাবর্তন করল সেটার বিশেষণ এক কথায় অবিশ্বাস্য!