রাত পোহালেই শুরু ‘নতুন’ লড়াই

সকাল থেকেই গ্রীষ্মের দাবদাহ। গা পুড়ে যাওয়ার উপক্রম। সূর্যের প্রখর তাপ থেকে প্রশান্তি খুঁজে নেওয়াই মুশকিল। কিছুটা যা স্বস্তি তা ছিল চট্টগ্রামের আকাশে মেঘের আনাগোনায়। পড়ন্ত বিকেলে সেই মেঘ বর্ষণে রূপ নিল। ভারী নয়, এক পশলা বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়ে গেল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম।

রোদ-বৃষ্টি আর আলো-ছায়ার লুকোচুরির দিনেই চট্টগ্রাম টেস্টের অন্তিম সময়ের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। রাত পোহালে এখানেই প্রথমবারের মতো লাল বলের ক্রিকেটে মুখোমুখি হবে উপ-মহাদেশের দল দুটি। যেখানে ফেভারিটের তকমা ইতোমধ্যে টাইগারদের শরীর মুড়িয়ে দিয়েছে। ‘আন্ডারডগ’ জিম্বাবুয়ে অবশ্য দারুণ কিছুর আশায় বুঁদ হয়ে আছে।

আফগানদের আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশের বিপক্ষে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অসংখ্যবার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা। তাই ফরমেটের বদল হলেও আত্মবিশ্বাসে কমতি নেই সফরকারীদের। বাংলাদেশ অবশ্য সতর্ক। টেস্ট ক্রিকেটের নবজাতকের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে সাবধানী বার্তা দিয়ে গেলেন টাইগারদের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

যিনি বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফরে ছিলেন না দলে। তার অনপুস্থিতিতে দ্বীপরাষ্ট্রের দেশে গিয়ে নাকানি-চুবানি খেয়েছে টাইগাররা। সীমিত ওভারের দুই ফরেমেটেই লঙ্কাওয়াশের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মোক্ষম সুযোগ হয়ে এসেছে ঘরের মাঠে আফগানদের বিপক্ষে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।

শক্তি, সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা, হোম কন্ডিশন- সবদিক থেকেই চট্টগ্রাম টেস্টে এগিয়ে রাখা হচ্ছে বাংলাদেশকে। আফগানদের আশার পালে হাওয়া দিচ্ছে সবশেষ টেস্টে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত দারুণ জয়টা। এই জয় তৃতীয় টেস্টে রশিদ অ্যান্ড কোংয়ের অনুপ্রেরণা। আজ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আফগান দলপতি তো এক প্রকার হুঁশিয়ারি দিয়ে বসেছেন, ‘হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।’

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়ে গেছে সপ্তাহ তিনেক আগে। তবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মিশন শুরু হচ্ছে আরো পরে। তাই চট্টগ্রাম টেস্ট বাংলাদেশের জন্য চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতির মঞ্চ। প্রস্তুতিমূলক এই টেস্টে বাংলাদেশ দলে নেই ওপেনার তামিম ইকবাল। মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি নিতে কার্যত বিশ্রামে আছেন তিনি। তামিমের শূন্যস্থান ভালোই ভাবাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।

টিম ম্যানেজমেন্টের একটি সূত্রের খবর- সৌম্য সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে দেখা যাবে সাদমান ইসলামকে। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিং বিভাগেও অন্যতম সেরা অস্ত্র মুস্তাফিজুর রহমানকে রাখা হয়নি এই টেস্টের দলে। ফিজের পরিবর্তে কাল নতুন বল হাতে দেখা যেতে পারে পেসার আবু জায়েদ রাহিকে। এই টেস্টে বাংলাদেশ দলে সম্ভাব্য একমাত্র পেসার তিনিই। একাধিক পরিবর্তন আসছে আফগানিস্তানের একাদশেও।

দুই দলের একাদশেই অনুমিতভাবেই স্পিন আধিক্য থাকবে। নেপথ্য কারণ চট্টগ্রামের ‘স্পিন বান্ধব’ উইকেট। টসও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এই টেস্টে। ওদিকে আবার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে- দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টি নামতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই আগে ব্যাট করতে মরিয়া থাকবে দুই দল। বৃষ্টি হোক বা না হোক, লড়াইয়ের আগ মুহূর্তে দুই দলের অধিনায়কেরই ভাষ্য একই রকম, এই টেস্টে স্পিনারদের যে দলের ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলবে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হবে তাদের পক্ষেই।

সম্ভাব্য একাদশ:

বাংলাদেশ: সৌম্য সরকার, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, আবু জায়েদ রাহি।

আফগানিস্তান: ইহসানউল্লাহ, ইব্রাহিম জাদ্রান, রহমত শাহ, হামমতউল্লাহ শাহিদি, আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবি, ইকরাম আলিখিল (উইকেটরক্ষক), রশিদ খান (অধিনায়ক), ইয়ামিন আহমাদজাই, কায়েস আহমেদ, জহির খান