নবি-মুজিব ঝড়ে আফগানদের নতুন ইতিহাস

হারের শঙ্কা চেপে বসেছিল আফগানিস্তানের ইনিংস শেষেই। শঙ্কার কালো মেঘ আরো ঘনীভূত হলো বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতেই। ৩২ রানের মধ্যে খোয়াতে হলো চার উইকেট। শুরুর এই বিপর্যয় আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি টাইগাররা। রবিবার রাতে আফগানদের ছুড়ে দেওয়া ১৬৪ রানের জবাব দিতে নেমে সাকিবরা গুটিয়ে গেছেন ১৩৯ রানে।

এক বল বাকি থাকতেই আফগানিস্তান জিতল ২৫ রানে। ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে এটা রশিদদের টানা দ্বিতীয় জয়। দাপুটে এই জয়ে ফাইনালের টিকিট হাতের মুঠোয় নিয়ে এলো আফগানরা। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টানা ১২ ম্যাচ জিতে নতুন বিশ্ব রেকর্ড নতুন করে লিখল তারা। আগের রেকর্ডটাও ছিল আফগানদের দখলে।

১৬৫ রানের লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সাজঘরে আসা যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। মিছিলটা অব্যাহত থাকল শেষ পর্যন্ত। ইনিংসের আগা-গোড়া চাপে থাকা স্বাগতিকদের পাঁচ ব্যাটসম্যান যেতে পারেননি দুই অংকে। তিনজন খুলতে পারেননি রানের খাতা। শেষ দিকে মুস্তাফিজর রহমান ঝলক দেখালেন ব্যাট হাতে; সাত বলে দুই চার ও এক ছক্কায় করেছেন ১৫ রান!

বাংলাদেশর পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ; ৩৯ বলের ইনিংসে মেরেছেন পাঁচটি চার। সাব্বির রহমানের ব্যাট থেকে ২৭ বলে এসেছে ২৪ রান। এই দুজনের ব্যাটে দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনের আশায় ছিল টাইগাররা। স্বাগতিকদের জয়ের সেই আসা ধূসর হয়ে গেছে দলীয় শতরানের মধ্যে দুজনের বিদায়ে।

এরপর আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটে আগের ম্যাচের পুনরাবৃত্তির স্বপ্ন দেখা। কিন্তু রূপকথা প্রতিদিন হয় না এটা প্রমাণ করে ফিরে গেছেন দুজনই। দুবার ক্যাচে দিয়ে বেঁচে যাওয়া আফিফ আউট হয়েছেন ১৬ রানে। ১২ রান করেছেন মোসাদ্দেক। এ ছাড়া অধিনায়ক সাকিব ১৩ বলে ১৫ রানে ফিরেছেন সাজঘরে।

চার উইকেট তুলে দিয়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন মুজিবুর রহমান। দুুটি করে শিকার রশিদ খান, ফরিদ মালিক ও গুলবাদিন নাইবের। যদিও ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি পাননি এদের একজনও। আফগানিস্তানকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ এনে দিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মদ নবি।

তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সুবাদেই দলীয় সংগ্রহ দেড় শ ছাড়িয়ে অনেকদূর এগিয়েছিল আফগানরা। জিম্বাবুয়ের পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও প্রলয় ঘটেছে এই অলরাউন্ডারের ব্যাটে। ৫৪ বলে ৮৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে অজেয় থাকলেন নবি। আগের ম্যাচে চারটি ছক্কা মারা নবি আজ মারলেন সাতটি। হার না মানা ইনিংসে চারের সংখ্যা চারটি।

অথচ ইনিংসের শুরুতে আফগানিস্তানের টুটি চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। ৪০ রানের মধ্যে অতিথিদের চার উইকেট ফেলে দিয়েছিলেন সাকিবরা। শুরুর এই বিপর্যয় আফগানিস্তান কাটিয়ে উঠেছে নবির বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে। এক প্রান্ত আগলে রেখে আসগর আফগান কেবল উইকেটের লাগাম টেনে ধরেছেন। ৩৭ বলে তিনটি চার ও দুই ছক্কায় ৪০ রানে আউট হয়েছেন আসগর।

আসগরের ব্যাট যতটা শান্ত ছিল ততটাই উত্তাল হয়ে উঠেছিল নবির ব্যাট। সেঞ্চুরি ও ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসেরও আভাস দিয়েছিলেন তিনি। যদিও ছয় রানের জন্য নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। পাননি সেঞ্চুরিও, আক্ষেপটা ১৪ রানের। শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে লক্ষ্যটা অন্তত নাগালের বাইরে যেতে দেয়নি বাংলাদেশ।

আফগানদের পতন হওয়া ছয় উইকেটের চারটি নিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ৩৩ রানে নিয়েছেন চার নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেও দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। আগের ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে বোলিং করা সাকিব এদিন দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। চার ওভারে মেডেনসহ ১৮ রান দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান: ১৬৪/৬ (২০ ওভার)
বাংলাদেশ: ১৩৯/১০ (১৯.৫)
ম্যাচ সেরা: মোহাম্মদ নবি (আফগানিস্তান)
টস: রশিদ খান (আফগানিস্তান)