আবার উত্তাল তাহরির স্কয়ার, সংঘর্ষ-ধরপাকড়

আবার সেই তাহরির স্কয়ার, যেখানে ২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ এসে আছড়ে পড়েছিল। সেই ধাক্কায় পতন ঘটেছিল মিশরের ৩০ বছরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের। দীর্ঘ ছয় বছরের নীরবতা ভেঙে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে শুক্রবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করেছেন মিশরীয়রা। তাদের দাবি, ‘খুনী’ আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

সিসি ও তার মুসাহেবি কর্মকর্তাদের বিলাসী জীবন-যাপন তথা ব্যাপক দুর্নীতির- অথচ দারিদ্র্যে জর্জরিত সাধারণ মানুষ- প্রতিবাদে শুক্রবার রাস্তায় নামে মানুষ। গত দুই দিনে এ আন্দোলন মিশরের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশ করতে রাজি না হওয়া বিক্ষোভকারীদের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, শনিবার রাতে বন্দরনগরী সুয়েজে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও তাজা গুলি চালায়। এতে বেশ কিছু লোক আহত হয়েছেন।

শুক্রবার বিক্ষোভ শুরু পর অন্তত ৭৪ জনকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের মুক্তি দাবি করে। সেইসঙ্গে বিক্ষোভকারীরাও সিসির পদত্যাগ দাবির পাশাপাশি আটকদের মুক্তির দাবি জানায়।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান কায়রোভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন দ্য ইজিপ্টশিয়ান কমিশন ফর রাইট অ্যান্ড ফ্রিডমের (ইসিআরএফ) বরাত দিয়েছে বলেছে, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে গণ-গ্রেফতার করছে নিরাপত্তা বাহিনী। শুক্রবার রাত পর্যন্ত অন্তত ২২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

এ ছাড়া শনিবার রাতে সুয়েজ, আলেকজান্দ্রিয়া ও গিজা শহরে আরো অন্তত ১০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে বলে ধারণা করছে মানবাধিকার সংগঠনটি।

অন্যদিকে, দ্য ইজিপ্টশিয়ান সেন্টার ফর ইকোনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রাইটস নামক আরেকটি বেসরকারি সংস্থা রোববার বলেছে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ২৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মুবারকের পতনের পর মিশরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মোহাম্মাদ মুরসি। কিন্তু তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল সিসি জন রায়কে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুৎ করে। এর পর মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীদের ওপর চলে গুম, খুনসহ নানা অত্যাচার-নির্যাতন। নিষিদ্ধ করা হয় বিক্ষোভ-সমাবেশ।

এর এর ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসেন তিনি। এর পর থেকে মিশরের মানুষের ওপর গুম-খুন, দমন-পীড়ন তথা অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাচ্ছেন। মুখ বুঝে সহ্যও করেছেন মিশরের মানুষ।

কিন্তু দারিদ্র্যে জর্জরিত হয়ে মিশরের মানুষ যখন জীবন সংগ্রামে পদে পদে হোঁচট খাচ্ছেন, তখন সিসি ও তার পরিষদ বর্গ জনগণের টাকা দিয়ে বিলাসী জীবন কাটাচ্ছে। তাই তো মরণকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আবার রাস্তায় নেমেছেন মিশরীয়রা।

এদিকে, বিগত ছয় বছর অত্যন্ত আরামে থাকা সিসি এই প্রথম বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি আতঙ্কে আছেন। আর সেই আতঙ্কে- দেশে যখন তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে তখন তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার নাম করে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন।

তবে সিসির নিউ ইয়র্ক যাওয়া নিয়ে ভিন্ন কথা বলছেন কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার সাংবাদিক আহমেদ মনসুর। তার মতে, স্বৈরশাসক সিসি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যাননি। তিনি মিশর থেকে নিউইয়র্ক গেছেন ঠিকই, তবে তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য।