তিস্তা এখনও অমীমাংসিত, ফেনীর পানি যাবে ত্রিপুরায়?
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
পূজার শুভেচ্ছা হিসেবে প্রায় সাত বছর বন্ধ থাকার পর বন্ধুত্বের খাতিরে ৫০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। এর ঠিক চার দিন পরই নয়া ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নয়া দিল্লি। এতে দেশজুড়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে চার গুণ। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এখন নয়া দিল্লি অবস্থান করছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে তিস্তা পানি নিয়ে কোনো অগ্রগতি না হলেও ফেনী নদীর পানি ইস্যুতে নতুন ঘোষণা আসতে পারে বলে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ঢাকা-নয়া দিল্লি কূটনৈতিক সূত্রগুলো।
বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন নদীসমূহ
আজ শনিবার(৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় ভারতের হায়দারাবাদ হাউজে ঢাকা-নয়া দিল্লি দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন।
ঢাকা-নয়া দিল্লি কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, মনু, খোয়াই, গোমতী, মুহুরী, ধরলা বা জলঢাকা, ফেনী ও দুধকুমার বা তরসা— এই সাতটি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবন্টন নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী ভারত। বিশেষ করে বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে পানি নিয়ে ত্রিপুরার জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করতে চায় ভারত। আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে এই নদীগুলো বিষয়ে বিশেষ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
ইতোপূর্বে, ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। ওই সফরে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফেনী নদীর পানি চান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘তিস্তায় পানি এলে ভারত ফেনীর পানি পাবে।’
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরো জানাচ্ছে, ঢাকার ওই শক্ত মন্তব্যের পর এ ব্যাপারে দীর্ঘ সময় সরাসরিভাবে কিছু বলেনি নয়া দিল্লি, বরং বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী ও আস্থার রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়েছে ভারত। যার ফলে ২০১৫ সালে পানি নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। এবারের দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে পানি বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, নতুন সিদ্ধান্তে তিস্তা বিষয়ে কিছু না থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু হবে না।
গত শনিবার ঢাকা-নয়া দিল্লি শীর্ষ বৈঠকের আগে এই বিষয়ে আলোচনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং তার আগে ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং ঢাকা সফর করে গেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সর্বশেষ ঢাকা সফরে বলেন,‘ভারত বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিশ্বের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত।’ এরপর গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নীতি নির্ধারণী ফোরামে তিনি বলেন,‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চর্চা শক্তিশালী করতে সামরিক বা অন্য কোনো সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাবে ভারত।’
এরমধ্যে ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং ঢাকা সফরে এসে বলেন,‘দুই দেশের ৫৪টি নদীর মধ্যে সাতটি নদী নিয়ে ঢাকা-নয়া দিল্লি যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নদীগুলো হচ্ছে— মনু, খোয়াই, মুহুরী, গোমতী, ফেনী, ধরলা ও দুধকুমার। এই নদীগুলোর পানি অর্ন্তবর্তীকালীন ব্যবহারের জন্য একটি সুস্পষ্ট কাঠামো প্রণয়নে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার গত ১০ বছরের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, চরমপন্থা-উগ্রবাদ-সন্ত্রাস দমনসহ ভারতের প্রায় যেকোনো আহ্বানে বাংলাদেশ উদারভাবে সহযোগিতা করছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা তিস্তার পানিবণ্টন, রোহিঙ্গা সংকটের মতো বাংলাদেশের জটিল সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সবসময় নীরবতা পালন করেছে ভারত। বিভিন্ন সময়েই ভারত স্থল সীমানা চুক্তির উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানান দিয়ে আসলেও পর্যবেক্ষকরা বলে থাকেন, স্থল সীমানা চুক্তি ভারতই দীর্ঘায়িত করেছে। বাংলাদেশের কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়নি।
পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ২০১১ সালেই দুই দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি নিয়ে সমাঝোতা হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন নেই। প্রতিটি সফরের আগে-পরেই দেখা গেছে, বাংলাদেশের দূতাবাস বা মন্ত্রণালয়ের প্রেস রিলিজে তিস্তা বিষয়ে আশাবাদ জানানো হয়। অন্যদিকে, ভারতীয় পক্ষে এ বিষয়ে কোন কথাই বলা হয়নি।
সর্বশেষ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে যে বৈঠক হয়, সেই বৈঠক নিয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও তার নজির মেলে। যেমন— ওই সময়কালীন ঢাকা-নয়া দিল্লির মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ভারতীয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিস্তা নিয়ে কোনো কথাই উল্লেখ করা হয়নি। আবার গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেখানেও তিস্তার কোনো উল্লেখ নেই।
নয়া দিল্লি যাওয়ার আগে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘এটা ঠিক যে ২০১১ সালে তিস্তা বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। আমরা বিষয়টি আবার তুলে ধরবো।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'কিছুদিন আগে দুই দেশের পানি সচিব পর্যায়ের সচিবরা ঢাকায় আলাপ করেছেন। দুই দেশের মধ্যে থাকা সবগুলো অভিন্ন নদীর রূপরেখা তারা তৈরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরেও নিশ্চয় এ বিষয়ে আলাপ করার সম্ভাবনা রয়েছে, ইনক্লুডিং তিস্তা।’
অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ পরিকল্পনা বা ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ কী চাবে— এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, এখানে পানি বিশেষজ্ঞও নেই।’
এমন সময়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেন,’আসলে এটার আলোচনা শুরু হয়েছে। এটা এখনো ওভাবে শেইপ নেয়নি। সুতরাং এত তাড়াতাড়িই কিছু বলা যাবে না। আমার মনে হয়, (প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে)ফিরে এলে হয়তো কিছু বলা যাবে।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.