আপনি পড়ছেন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও মোটা প্লাস্টিক দড়ি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে বীভৎসভাবে হত্যার বর্ণনা দিয়েছে আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মহানগর হাকিম খন্দকার ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে তার দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নির্যাতনের এ লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে আসে।

ifti mosharraf sokalইফতি মোশাররফ সকাল

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সমাজসেবা উপসম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল তার জনানবন্দিতে বলেন, আবরারকে হাত-পা-মুখ চেপে ধরে পেটাতে পেটাতে একপর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। তাকে নিচ থেকে তুলে আবারও পেটানো হয়। মার সহ্য করতে না পেরে ঘণ্টা কয়েক পর বমি করে আবরার। এভাবে তিনবার বমি করার পর নিস্তেজ হয়ে যায় তার শরীর।

ইফতি মোশাররফ সকালের কক্ষেই গত ৬ অক্টোবর রাতে ‘শিবিরকর্মী’ সন্দেহে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন ইফতিসহ ছাত্রলীগের অন্তত ২২ জন নেতাকর্মী। আসামিদের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র।

abrar killing massenger group

সূত্রগুলো জানিয়েছে, আবরারকে ডেকে আনা থেকে শুরু করে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত পুরো সময়টায় সক্রিয় ছিল ইফতি সকাল। জিজ্ঞাসাবাদে সে পুরো ঘটনার আদ্য-প্রান্ত বর্ণনা দিয়েছে।

আদালতকে ইফতি বলেন, হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে ৪ অক্টোবর আবরারকে মারধর করে হল ছাড়া করতে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশ দেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন। সে গ্রুপে লেখে, ‘১৭-র আবরার ফাহাদ। মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। এর আগেও বলেছিলাম। তোদের তো দেখি কোনো বিকার নেই। শিবির চেক দিতে বলেছিলাম।’

এর এক পর্যায়ে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা মেসেঞ্জার গ্রুপে সাড়া দিয়ে আবরার কোথায় জানতে চান। ইফতিকে বলেন, ‘ওকে বাড়ি থেকে ফিরতে দেন।’ আবরার ফিরলে ৬ অক্টোবর রাত আটটায় তাকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে মোবাইল-ল্যাপটপ চেক করা হয়। এতে বুয়েট ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুনতাসির আল জেমি অংশ নেয়।

abrar buet bsl

জবানবন্দিতে ইফতি জানান, আবরারের ডিভাইসগুলো চেক করার সময় রুমে আসনে মেহেদী হাসান রবিন ও বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন। এ সময় রবিন আবরারকে বেশ কয়েকটি চর মেরে তার কাছ থেকে বুয়েটে শিবির করাদের নাম বের করার নির্দেশ দেন।

পরে সামসুল আরেফিন রাফাত বাইরে থেকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প এনে ইফতির হাতে দেয়। আবরারের কাছ থেকে তথ্য বের করতে স্ট্যাম্প  দিয়ে চার-পাঁচটি পিটোনি দিলে স্টাম্পটি ভেঙে যায়। এরপর আরেকটা স্ট্যাম্প নিয়ে আবরারের হাঁটু, পা, পায়ের তালু ও বাহুতে পেটাতে থাকেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার।

এ সময় মারের চোটে উল্টাপাল্টা কয়েকটি নাম বলতে থাকলে আবরারকে চড় মারার পর স্ট্যাম্প দিয়ে হাঁটুতে বাড়ি দেন মেফতাহুল। বিষয়টি নিয়ে তখন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন রবিন।

ইফতি আদালতকে বলেন, নির্যাতনের মুখে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অসুস্থ হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকে আবরার। ক্যান্টিন থেকে খেয়ে এসে মেঝে থেকে তাকে তুলে কয়েকটি চড় মারেন। এরপর মুজাহিদুর রহমান মোটা প্লাস্টিকের দঁড়ি দিয়ে আবরারকে পেটাতে থাকেন। ফের স্টাম্প দিয়ে আবরারের হাঁটু ও পায়ে আঘাত করতে থাকেন ইফতিও।

abrar cctv

রাত ১১টায় অনিক সরকার ফের কক্ষে এসে শিবির কেমনে পেটাতে হয় দেখ বলে স্ট্যাম্প দিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আবরারকে এলোপাতাড়ি শতাধিক আঘাত করেন। অনিকের এই মাইর দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়, গেলে রাত ১২টার পর মারা রেখে কক্ষের বাইরে যান অনিক।

এ সময় আবরারের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে অসুস্থ হয়ে পড়ে, মাথার নিচে বালিশ দেয়ার কিছুক্ষণ পর বমি করেন। বিষয়টি ফোনে অনিককে জানালে তাকে গোসল করিয়ে হাতে-পায়ে মলম লাগাতে বলেন। এ সময় আবরার দ্বিতীয়বার বমি করলে রবিন বলেন, ‘ও নাটক করছে’।

অবস্থা বেগতিক দেখে আবরারকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে শুইয়ে রাখা হয়। এ সময় খুদে বার্তা পাঠিয়ে বিস্তারিত জানতে চান অমিত সাহা এবং আবরারকে আরো মেরে সব তথ্য বের করার নির্দেশ দেন। আবরারের অবস্থা বেশি খারাপ জানালে তাকে হল থেকে বের করে দিতে বলেন অমিত। পরে রবিন ও অনিক ২০০৫ নম্বর কক্ষে এসে আবরারকে দেখে ‘ও ঠিক আছে’ বলে চলে যান।

এ সময় আবরার তৃতীয়বার বমি করলে পুলিশের হাতে দিতে নিচে নামাতে বলেন রবিন। ১৭ ব্যাচের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আবরারকে নিচে নামাতে ব্যর্থ হলে তোশকসহ কয়েকজন মিলে আবরারকে নিয়ে সিঁড়িতে নামিয়ে রাখেন। তখন আবরার বলছিল, ‘আমার খুব খারাপ লাগছে।’

এ সময় হলের প্রধান ফটকে থাকা পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিলেন রাসেল। মুনতাসির দৌড়ে এসে তাদের জানায়, আবরারের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। পরে অ্যাম্বুলেন্সে ফোন দেন ইসমাইল ও মনির। অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হওয়ায় বাইক নিয়ে বুয়েটের মেডিকেলের চিকিৎসক নিয়ে আসেন তামিম। চিকিৎসক সিঁড়িতে আবরারকে ‘ও মারা গেছে’ বলে জানান। এ কথা শুনে ইফতি একটি কক্ষে গিয়ে শুয়ে থাকেন, পুলিশ সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.