ফের একাট্রা ‘তিন মোড়ল’

‘বিগ থ্রি’ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এন শ্রীনিবাসনের মস্তিষ্ক থেকে কূটচালটা বেরিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে একচ্ছত্র আধিপত্যের পাঁয়তারা করেছিলেন শ্রীনি। শেষ পর্যন্ত তারই উত্তরসূরি শশাঙ্ক মনোহর তিন মোড়লের পরিকল্পনা প্রায় ভেস্তে দিয়েছেন।

আইসিসির চেয়ারম্যান হওয়ার পরই বিগ থ্রি প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন মনোহর। বিশ্ব ক্রিকেটে সাম্যতা প্রতিষ্ঠায় লড়াই করে যাচ্ছেন তিনি। সে লড়াইয়ের বড় একটা পদক্ষেপ আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট বাড়ানো। কিন্তু তাতে আপত্তি তোলে বিসিসিআই। রাজস্ব আয় কমার শঙ্কাতেই বেঁকে বসে ভারত।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে এখন নতুন সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি। সর্বসম্মতিক্রমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বোর্ড প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। আইসিসির বাড়তি টুর্নামেন্টের বিরোধিতার লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে নিরুপায় সৌরভকেও। বোর্ডের স্বার্থরক্ষার্থেই আইসিসির বিরুদ্ধে ব্যাট করতে হচ্ছে তাকে।

বিসিসিআই এই লড়াইয়ে পাশে পাচ্ছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে (সিএ)। সরাসরি আইসিসির বিরোধিতা করতে মাঠে নেমে পড়েছে শক্তিশালী এই ক্রিকেট বোর্ড। সুর মিলিয়েছে ভারতের সঙ্গে। তিন মোড়ল একজোট হওয়ায় আইসিসি কখন না আবার কোণঠাসা হয়ে পড়ে!

২০২৩ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নতুন করে আটটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিসি। বিশ্ব ক্রিকেটের অভিভাবকদের এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ভারত। তাদের শঙ্কা টুর্নামেন্টগুলো আয়োজন করা হলে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে প্রভাব পড়তে পারে। তাতে আয় কমতে পারে বোর্ডের।

এমনটা ভাবছে সিএ এবং ইসিবিও। তিনটি ক্রিকেট বোর্ডই এখন লড়াইয়ে নেমেছে। বাড়তি টুর্নামেন্টের বিরোধিতা করে আইসিসিকে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন ইসিবি চেয়ারম্যান কলিন গ্রাভস। পরে গ্রাভস বলেছেন, ‘আইসিসি ছেলেদের বর্ধিত যেসব টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তাব করেছে তার সঙ্গে আমরা একমত হতে পারছি না। এটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও টেস্টের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।’

এ প্রসঙ্গে বিসিসিআইয়ের কোষাধ্যক্ষ অরুন ধুমালের ভাষ্য, ‘আমরা সরাসরি এই কাঠামোর বিরোধিতা করছি।’

সিএ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন রবার্টসের ভাষ্য, ‘আমরা এ রকম ঝূঁকিপূর্ণ একটা ভবিষ্যতের দিকে হাঁটতে পারি না। অব্যশই এটা নিয়ে আলোচনার দরকার আছে। আমরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত আছি।’

অস্ট্রেলিয়ার মতো আইসিসির সঙ্গে বসতে চাচ্ছে ভারত, ইংল্যান্ডের বোর্ডও। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আইসিসি আলোচনায় বসতে রাজি হবে তো? না হলে যে তিন মোড়লের সঙ্গে একাই লড়তে হবে আইসিসিকে। তিনটি ক্রিকেট বোর্ডের যে পরিমাণ প্রভাব তাতে করে ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়ে পুণরায় ভাবা লাগতে পারে আইসিসিকে। জলে বাস করে তো আর কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যায় না!