এই চিঠির প্রাপক আপনিই

পাঠক, আপনার নিকট একটি চিঠি এসেছে। না না, ভুল পড়েননি, আপনার কাছেই এসেছে। আর কেউ যদি মনে করে থাকেন, সামান্য একটা ভাইরাস নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে, তাহলে এই চিঠি অবশ্যই আপনাকে পড়তে হবে। লিখেছেন খ্যাতিমান ইতালীয় ঔপন্যাসিক ফ্রান্সেসকা মেলান্দ্রি। ইতালিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার দরুণ দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি এই লেখিকা। সেখান থেকেই লিখেছেন আপনার উদ্দেশ্যে। গার্ডিয়ানে প্রকাশিত বিশাল এই খোলা চিঠির সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে ধরা হল-

ইতালীয় ঔপন্যাসিক ফ্রান্সেসকা মেলান্দ্রি, যিনি আপনার নিকট চিঠিটি পাঠিয়েছেন

আমি প্রায় নরক হয়ে যাওয়া ইতালি থেকে লিখছি। যার অর্থ, আমি আপনার ভবিষ্যত লিখছি। আমরা এখন যেখানে আছি, আর কয়েকদিন পরেই আপনারাও সেখানে থাকবেন। আপনার থেকে আমরা সামান্য কিছুটা এগিয়ে আছি, যেমনি আমাদের থেকে এগিয়ে ছিল উহানের বাসিন্দারা। আপনি এখন যেমনটা বলছেন, দিন কয়েক আগে ঠিক আমরাও বলেছিলাম, ‘সামান্য একটা ফ্লু নিয়ে এত বিচলিত হওয়ার কী আছে!

যেহেতু আপনার ভবিষ্যত আমি জানি, তাই বলতে পারি, শিগগিরই ঘরবন্দি জীবন আপনার কাছে অসহ্য লাগতে শুরু করবে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার কিংবা ইউটিউবের টিউটোরিয়াল- কিছুই আপনাকে এতটুকু স্বস্তি দিতে পারবে না। আপনি আপনার প্রিয়জন-বন্ধুদেরকে মিস করতে থাকবেন। বিরহটা বাড়তে বাড়তে একসময় সেটা আপনার বুক ভেঙে দেবে। যাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করবেন না বলে কসম খেয়েছিলেন, তাদের ইনবক্সে গিয়ে লিখবেন, ‘কী অবস্থা?’

একান্ত প্রয়োজনে আপনি যখন বাসা থেকে বের হবেন, আপনার মনে হবে বিশালাকার রাস্তাটা মরে পড়ে আছে। আপনার নিজেকে বিপন্ন মনে হবে। বিশেষত আপনি যদি একজন নারী হন, তাহলে তো কথাই নেই। দ্রুত পায়ে আপনি ঘরে ফিরে আসবেন। আপনার কাছে মনে হবে, যেন পরিত্যক্ত কোনো জায়গা ছেড়ে লোকালয়ে আসলেন।

লকডাউন উঠে গেলেই কার কার সঙ্গে দেখা করবেন, তার একটা তালিকা তৈরি করবেন আপনি। সেই তালিকা লম্বা থেকে আরো লম্বা হতে থাকবে। একসময় বিরক্ত হয়ে তালিকাটা ছিঁড়ে ফেলবেন আপনি।

জীবনসঙ্গীর সঙ্গে এসময় খুব ঝগড়া হবে আপনার। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেবেন, এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির পরপরই অসহ্য এই সঙ্গীকে তালাক দেবেন। কিন্তু এর মধ্যেই আপনারা হয়ে উঠবেন অনাগত সন্তানের বাবা-মা।

থমকে যাওয়া ইতালির দৃশ্য

আমি অর্ধমৃত ইতালি থেকে এসব বলছি। কথাগুলো হচ্ছে তাই, যা আপনার ভবিষ্যত সম্পর্কে আমি জানি। কিন্তু যদি আরো দূরবর্তী ভবিষ্যতের দিকে তাকাই, যেটা আমি-আপনি কেউই জানিনা, তাহলে আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি- সবকিছু বদলে যাবে, কোনো কিছুই আর আগের মতো থাকবে না!