কর্মীদের চাকরি বাঁচাতে বেতন নেন না তারা

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) থাবায় জর্জরিত গোটা বিশ্ব। সংক্রমণের বিস্তার রোধে দেশে দেশে চলছে লকডাউন। কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে অনেক কর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন। তবে এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে মানবতাও দেখিয়েছেন অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক। কর্মীদের চাকরি বাঁচাতে এবং বেতন ঠিক রাখতে নিজেরাই বেতন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

কর্মীদের চাকরি বাঁচাতে বেতন না নেওয়া বিভিন্ন কোম্পানির সিইও

বর্তমান পরিস্থিতির বাইরে নয় ভারতও। দেশটিতে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতেও স্বনামধন্য ছয়টি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের কোনো প্রকার ছাঁটাই করেনি। তাদের বেতন থেকে অর্থও কাটেনি। বরং কর্মীদের বেতন-ভাতা চালু রাখতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং প্রতিষ্ঠাতাগণ নিজেদের বেতন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

তেমনি একজন হলেন ভারতীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাজাজ অটোর সিইও রাজীব বাজাজ। বিশ্বজুড়ে চলমান সংকটের মধ্যে কোম্পানিটির কর্মীদের বেতন-ভাতা ঠিক রাখতে তিনিসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ স্বেচ্ছায় নিজেদের বেতন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি সমাজের অসহায় মানুষের সহযোগিতার জন্য অন্য কর্মীদেরও নিজেদের বেতন কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

বাজাজ অটোর সিইও রাজীব বাজাজ

সম্প্রতি তিনি জানান, লকডাউন উঠে যাওয়ার পরও কিছু মাস তিনি এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ তাদের বেতন নেবেন না। কারণ কর্মীদের বেতন কমানোর আগে তিনি নিজেরটা কাটতে চান।

'ওলা' ক্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সিইও ভবিশ আগারওয়াল

ভারতের জনপ্রিয় ক্যাব সার্ভিস 'ওলা' ক্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সিইও ভবিশ আগারওয়াল কিছুদিন আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, চলতি বছর তিনি নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের বেতন নেবেন না। তার প্রতি মাসের বেতন প্রতিষ্ঠানটির ‘ড্রাইভ দ্য ড্রাইভার ফান্ডে’ অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে। এই ফান্ডটি মূলত ওলার গাড়ি চালকদের আর্থিক সংকট মেটানোর জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংকের সিইও উদয় কোটাক

কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো আরো এক মহানুভব ব্যক্তি হলেন কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংকের সিইও উদয় কোটাক। চলতি মাসে এক বিবৃতিতে তিনি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটে ব্যাংকের কর্মীদের যাতে ছাঁটাইয়ের সম্মুখীন হতে না হয় এবং তাদের যেন ঠিক সময়ে বেতন প্রদান করা যায় তা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে মাত্র এক টাকা বেতন নিবেন তিনি। বাকি পুরো টাকা চলে যাবে ব্যাংকটির ফান্ডে। যা দিয়ে কর্মীদের বেতনের সংকট পূরণ করা হবে। এমনকি চলমান সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ত্রাণ তহবিলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ২৫ কোটি রুপি অনুদান দিয়েছেন।

ভ্রমণ এজেন্সি 'মেক মাই ট্রিপের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও দীপ কালরা

ভারতের জনপ্রিয় ভ্রমণ এজেন্সি 'মেক মাই ট্রিপের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও দীপ কালরা। সম্প্রতি তিনি ঘোষণা করেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি এক পয়সাও বেতন নেবেন না। অসহায়দের সহায়তা দেওয়ার জন্য তার বেতনের পুরোটাই জমা দেওয়া হবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রাণ তহবিলে। লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কর্মীকে তিনি ইতোমধ্যে আর্থিকভাবে সহায়তাও করেছেন।

পেটিএমের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় শেখর শর্মা

চলমান সংকটের মধ্যে কর্মীদের কথা চিন্তা করে বেতন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারতের মোবাইল পেমেন্ট অ্যাপস পেটিএমের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় শেখর শর্মা। সম্প্রতি এক ঘোষণায় তিনি জানান, আগামী দুই মাস তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের বেতন নেবেন না। তার এই অর্থ করোনায় আক্রান্ত বা লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের সহযোগিতার জন্য দেওয়া হবে।

ওয়ো’র প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও রিতেশ আগরওয়াল

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ওয়ো’র প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও রিতেশ আগরওয়াল জানান, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কর্মীদের যাতে ছাঁটাই করতে না হয়, তাই চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগামী ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কোনো বেতন নেবেন না তিনি। কর্মীদের প্রতি তার এই সহানুভূতি দেখে প্রতিষ্ঠানটির আরো অনেক কর্মকর্তা নিজেদের বেতন না নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের কেউ দুই মাস কেউ বা আবার ছয় মাস বেতন না নেওয়ার কথো জানিয়েছেন।