প্রতিনিয়ত নতুন উপসর্গ নিয়ে হাজির হচ্ছে করোনা!

দিন যত যাচ্ছে নতুন নতুন উপসর্গ নিয়ে হাজির হচ্ছে মরণব্যাধী করোনাভাইরাস। আবার অনেকের মধ্যে কোনো উপসর্গই প্রকাশ পাচ্ছে না। পরীক্ষার পর দেখা যায়, তারা কোভিড-১৯ রোগে সংক্রমিত। ফলে ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। উপসর্গবিহীন ও নতুন উপসর্গ নিয়ে বাংলাদেশও অসংখ্য রোগী ধরা পড়ছে।

প্রতিনিয়ত নতুন উপসর্গ নিয়ে হাজির হচ্ছে করোনা

সম্প্রতি ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। তার মধ্যে কোনো উপসর্গ ছিল না। ভাইরাসটিতে সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে আসায় সতর্কতা হিসেবে তিনি পরীক্ষা করান। এরপরই তার দেহে এটি শনাক্ত হয়। তবে তিনি ঘ্রাণ শক্তি হারিয়ে ফেলেন বলে জানিয়েছেন।

করোনায় সংক্রমিত এক সাংবাদিক জানান, তার শরীরে শুধু জ্বর ছিল, সাথে হালকা ডায়রিয়া হচ্ছিল। তবে জ্বরের মাত্রা তেমন তীব্র ছিল না। ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম ছিল। বরং অন্যান্য সময় এর চেয়েও তীব্র জ্বরেও ভুগেছেন। সন্দেহবশত টেস্ট করানোর পর রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এদের মতো আরো অনেকের ক্ষেত্রেই এমনটা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুরুতে তীব্র জ্বর, সর্দি-কাশি, শুকনো কাশি ও শ্বাসকষ্টকে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ বলে ধরে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে ততই ভাইরাসটি নতুন নতুন উপসর্গ নিয়ে হাজির হচ্ছে। বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশেরই কাঁপুনি, পেশীর যন্ত্রণা, মাথা ব্যথা, স্বাদ ও ঘ্রাণ শক্তি হারিয়ে ফেলার মতো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, সাধারণত ১৪ দিনের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, নতুন উপসর্গ হিসেবে পেশী ও গিঁটে গিঁটে ব্যথা দেখা দেওয়া অন্যতম। ব্যথা মারাত্মক হলে ফুসফুসের অ্যাকিউট রেসপিরেটর ডিসট্রেস সিনড্রোমের শঙ্কা বেড়ে যায়।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, কাঁপুনি, পেশীর যন্ত্রণা, মাথা ব্যথা, স্বাদ ও ঘ্রাণ শক্তি হারিয়ে ফেলা, অতিরিক্ত দুর্বল বোধ হওয়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়াকেও এখন করোনার উপসর্গ হিসেবে যোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকাডেমি অব অবথালমোলজি। এ ছাড়া ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত শিশুদের পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া, চামড়ার রঙ পরিবর্তন এবং শরীরে লালচে র‌্যাশ দেখা দিচ্ছে।

হাসপাতালটির কোভিড-১৯ কমিটির সদস্য সচিব ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ফুসফুসের সমস্যার কারণেই শ্বাসকষ্ট হয়, এমন কোনো কথা নেই। রক্ত জমাট বেঁধেও তা হতে পারে। আর এটা কোভিড-১৯ রোগে মৃত্যুবরণ করার অন্যতম কারণ। তাছাড়া এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেক রোগীর করোনা পজেটিভ আসছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ বিষয়ক সমন্বিত কন্ট্রোল কক্ষের যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. মো রিজওয়ানুল করিম বলেন, করোনা মিউটেশন হয়ে তার স্ট্রেইন বদলায়। আর স্ট্রেইন অনুসারে প্রতিনিয়ত উপসর্গ বদলায়। ভাইরাসটির আরএনএ পরিবর্তিত হওয়ার ক্ষমতা বেশি। তাই পৃথিবীর অনেক দেশে এটির বিভিন্ন স্ট্রেইন পাওয়া গেছে। উপসর্গের বৈচিত্র নির্ভর করে ভাইরাসের স্ট্রেইনের ওপর। ফলে স্ট্রেইন বদল হলে সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা বদলাতে পারে।