কে জানতো, সেই তিনিই একদিন দেশের রাষ্ট্রপতি হবেন!

মানুষের জীবন যে বড্ড অনিশ্চিত (সেটা হোক ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচকভাবে), সিঙ্গাপুরের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট (২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত) হালিমা ইয়াকুব সেটার উজ্জ্বল প্রমাণ। যে মানুষটি এক সময় ক্ষুধার তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনিই আজ একটি দেশের রাষ্ট্রপতি! উপরন্তু একজন নারী হয়ে তিনি হয়েছেন সিঙ্গাপুরের মতো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।

সিঙ্গাপুরের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব

১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া হালিমা বাবাকে হারান মাত্র ৮ বছর বয়সে। উপার্জন করা একমাত্র মানুষটি চলে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সংসারটি চলে যায় খাদের কিনারে। অগত্যা হালিমা ইয়াকুবের মা হোটেলে ঝিয়ের কাজ নেন। স্কুল শেষে হালিমা এসে মাকে সাহায্য করতেন। চোখের সামনে অনেক ভালো ভালো খাবার সাজানো থাকলেও খেতে পারতেন না। রাতে হোটেলের উচ্ছিষ্ট দিয়েই আহার করতেন মা ও মেয়ে।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, আরো কিছুটা বড় হওয়ার পর যখন তার ভেতর অভিমান জন্ম নেয়, তখন তিনি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একদিন সত্যিই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, কিন্তু মৃত্যু তার ললাটে লেখা ছিল না। লেখা ছিল, তিনি একদিন দেশের রাষ্ট্রপতি হবেন!

ক্ষুধার তীরে বিদ্ধ হতে থাকলেও পড়াশোনা বাদ দেননি হালিমা। সত্তরের দশকে তিনি ছিলেন সিঙ্গাপুর চাইনিজ গার্লস স্কুলের সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন। তারপর কলেজ শেষে একসময় ভর্তি হন সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়ায় বৃত্তিতেই লেখাপড়ার খরচ মিটে যেতো। ১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসের একজন আইন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর তার জীবন থেকে স্থায়ীভাবে বিদায় নেয় দারিদ্র্য।

স্বামীর সঙ্গে

২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাজনীতিতে নামেন। সংসদ সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেন টানা ৪টি সাধারণ নির্বাচনে। এরমধ্যেই সামাজিক উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন সফলতার সঙ্গে। ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন দেশটির প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হিসেবে।

যে মায়ের সীমাহীন সংগ্রামে হালিমা ইয়াকুব আজকের রাষ্ট্রপতি, সেই মা পরপারে চলে যান ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ওইদিন সিঙ্গাপুরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য মেয়ে হালিমার বিজয় দেখে যেতে পারেননি মা, দেখতে পারেনি রাষ্ট্রপতি মেয়েকেও।