পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যত মহামারির সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে করোনাভাইরাসকে সবচেয়ে 'জটিল' বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এই ভাইরাস প্রতিনিয়ত যেভাবে নিজের চরিত্র বদলাচ্ছে, তাতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোগের সঠিক অবস্থা ঠিকভাবে বুঝা যাচ্ছে না। এমন ঘটনা চিকিৎসক হিসেবে কখনো কেউ দেখেননি। এমনকি কখনো শোনা যায়নি বলেও জানান তারা।

corona virus 11করোনার রহস্য চিকিৎসকরাও ধরতে পারছেন না

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের প্যাডিংটনের সেন্ট মেরি‌’জ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট অধ্যাপক এ্যান্টনি গর্ডন বলেন, অধিকাংশ চিকিৎসকই শুরুর দিকে করোনাকে শ্বাসতন্ত্র আক্রমণকারী ভাইরাস বলে মনে করেছিলেন। যা মৌসুমি ফ্লুর মতোই নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে এবং ব্যাপক আকারে ছড়াতে পারে। কিন্তু খুব দ্রুতই এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ভাইরাসটি শুধু রোগীদের শ্বাসতন্ত্রই আক্রান্ত করে না, বরং আরো অনেক অঙ্গে সংক্রমণ ছড়ায়।

বার্মিংহ্যামের চিকিৎসক রন ডানিয়েলস বলেন, কোভিড-১৯ যে অসুস্থতা তৈরি করছে তা একেবারেই অন্যরকম। এমনটা আমরা আগে কখনো কোন রোগীর মধ্যে দেখিনি। তাছাড়া এই রোগে যারা সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে যান, তাদের ফুসফুসে তীব্র প্রদাহ এবং রক্ত জমাট বাঁধা শুরু হয়ে যায়। এর ফলে অন্যান্য প্রত্যঙ্গগুলোও আক্রান্ত হয় এবং রোগীর সারা দেহে জীবন বিপন্ন করার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

লন্ডনের একটি হাসপাতালের থ্রম্বোসিস বিশেষজ্ঞ বেভারলি হান্ট বলেন, ‍একজন ডাক্তারের চোখে এই ধরনের ঘটনা এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। কারণ আমাদের সামনে অনেক রোগীর মধ্যেই এমনটা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। যার ফলে ভাইরাসটির আচরণ বুঝতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

গত দুই মাসে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা যায়, যেসব করোনা রোগী আসছিল, তাদের অধিকাংশেরই শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ অনেক ছিল। আর সবচেয়ে গুরুতর অসুস্থদের ফুসফুসের পাশাপাশি দেহের অন্যান্য অঙ্গেও সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। তাদের দেহের রক্তে এমন অবিশ্বাস্য কিছু ঘটছিল, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে উত্তর লন্ডনের হুইটিংটন হাসপাতালের অধ্যাপক হিউ মন্টগোমারি বলেন, কিছু রোগীর রক্তে অবিশ্বাস্য রকমের কম মাত্রায় অক্সিজেন থাকলেও তারা অসুস্থ বোধ করেন না। আমরা এখনো জানি না কেন এমনটা হচ্ছে। মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিন নামে যে কণিকা আছে সেটাই মূলত অক্সিজেন সরবরাহ করে। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৮০ শতাংশ বা তার চেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে।

corona medicineকরোনার রহস্য চিকিৎসকরাও ধরতে পারছেন না

সম্ভবত এ ঘটনার সঙ্গে প্রদাহের একটা সম্পর্ক আছে। যার কারণে রক্তনালীর ওপর এর প্রভাব পড়ছে। এতে অক্সিজেন রক্তে মিশতে পারছে না ঠিকই। কিন্তু ফুসফুসের প্রাথমিক স্তরে হয়তো তেমন প্রভাব পড়ছে না। তাছাড়া এটি হচ্ছে করোনার অসংখ্য রহস্যের একটি। তাই বিষয়টি নিয়ে আরো জরুরিভাবে গবেষণা দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক এ্যান্টনি গর্ডন।

আবার অনেক সময় দেখা যায়, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ভেন্টিলেশন পদ্ধতি ঠিকভাবে কাজ করছে না। এক্ষেত্রে ভেন্টিলেটর দিতে হলে রোগীকে প্রথমে অজ্ঞান করতে হয়। পরে তার শ্বাসনালীতে একটা নল ঢোকাতে হয়। এই পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে অনেক গুরুতর রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটর দিলে ভুল সময়ে ভুল চিকিৎসা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগ বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যায়। তাই কোন পর্যায়ে কীভাবে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হবে তা বুঝতে আরো সময় লাগবে। কারণ গুরুতর নিউমোনিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ ভেন্টিলেটর দিতে হয়। কিন্তু করোনা রোগীদের আরো অনেক বেশি সময় ধরে ভেন্টিলেটর দিতে হচ্ছে।

তাছাড়া ফুসফুস বা রক্তনালীর নজিরবিহীন প্রদাহ ভাইরাসটিকে একেবারেই ভিন্ন এক রোগে পরিণত করেছে। ফলে আক্রান্ত রোগীর রক্ত জমাট বেঁধে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর গুরুতর রোগীদের ২৫ শতাংশের দেহেই অবিশ্বাস্য রকমের ঘন এবং আঠালো রক্ত তৈরি হয়। এতে করে রোগীর পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। পাশাপাশি সারা শরীরে ঘুরে ফুসফুসে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে।

থ্রম্বোসিস বিশেষজ্ঞ বেভারলি হান্ট বলেন, জমাট বাঁধা রক্ত মস্তিষ্ক বা হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। যার ফলে রোগীর হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে। সাধারণত রক্তে যে প্রোটিন জমাট বাঁধার সমস্যা সৃষ্টি করে তার নাম ফাইব্রিনোজেন। এক লিটার রক্তে এটির পরিমাণ ২-৪ গ্রাম। কিন্তু করোনা রোগীর রক্তে ফাইব্রিনোজেনের পরিমাণ লিটার প্রতি ১০-১৪ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.