দিল্লি দাঙ্গা: চার্জশিটে নেই কোনো বিজেপি নেতাকর্মীর নাম

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের দিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এক পর্যায়ে দাঙ্গায় রূপ নেয়। ওই দাঙ্গায় মুসলিমদের বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাকাণ্ড ঘটায় ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমর্থকগোষ্ঠী। কিন্তু দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলার চার্জশিটে একজনও বিজেপি নেতা-কর্মীর নাম রাখেনি দিল্লি পুলিশ।

দাঙ্গায় মুসলিমদের বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়

ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে, ১৭ হাজার ৫০০ পাতার বিশাল এই চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে দাঙ্গার বিশদ বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেই চার্জশিট ইতোমধ্যে আদালতে পেশ করা হয়েছে। সেখানে ক্ষমতাসীন বিজেপির কোনো নেতা-কর্মীর নাম রাখা হয়নি, শুধু সিএএ’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আসামি করা হয়েছে। এরপর থেকেই এটি নিয়ে নতুনভাবে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

আদালতে দিল্লি পুলিশ যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে কেবল নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির নেতাকর্মীদের বিশেষ করে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল নেতাকে অভিযুক্ত করেছে দিল্লি পুলিশ।

অথচ দাঙ্গায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাকর্মী ও সমর্থকগোষ্ঠীর পাশাপাশি দিল্লি পুলিশের সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সম্প্রতি তাদের করা এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

ওই দাঙ্গায় পুলিশ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ করে সংস্থাটি জানায়, ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া দিল্লির ওই দাঙ্গায় অন্তত ৫৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক।

দিল্লিসহ পুরো ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। সেটিই এক পর্যায়ে দাঙ্গায় রূপ নেয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বিক্ষোভকারীদের মারধর, আটকদের নির্যাতন এবং হিন্দুদের সঙ্গে দাঙ্গায় সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল দিল্লি পুলিশ। ফলে মুসলিমদের ব্যাপক ভোগান্তি ও নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে দিল্লি পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দিল্লির দাঙ্গায় হিন্দুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, তবে দাঙ্গার মূল টার্গেট ছিলেন মুসলিমরা। কারণ দাঙ্গা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়নি এবং এতে হতাহতের সংখ্যা হিন্দুদের তুলনায় তিনগুণ বেশি হয়েছে মুসলিমদের। এ ছাড়া মুসলমানদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে দুর্বৃত্তরা।

সহিংসতার ভিডিও ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সময় দাঙ্গার সমর্থনে মুসলিমদের বাড়ি-ঘর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও মুসলিমদের মারধর করছে উত্তেজিত হিন্দুরা। আর এসব কাজে তাদের সহায়তা করেছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। সহিংসতায় নীরব ভূমিকা পালন করেছে তারা।

এমনকি ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতারা দাঙ্গায় উস্কানি দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ জানালেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।