যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন: কে বিজয়ী জানা যাবে কবে?

নির্বাচন হয়ে গেছে চার দিন আগে। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি ভোট গণনা। ফলে জানা যাচ্ছে না কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট। যতোগুলো ভোট গণনা শেষ হয়েছে, তাতে বেশ এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। বিপরীতে পিছিয়ে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা হোক, আপাতত সবার মনে প্রশ্ন— কে বিজয়ী জানা যাবে কবে।

আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর ঝুলে আছে অনেক যদি ও কিন্তুর উপর। প্রেসিডেন্ট হতে হলে একজন প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেতে হয়। এখন পর্যন্ত এই পরিমাণ ভোট কেউ পাননি। ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রাপ্ত ইলেক্টোরাল ভোটের পরিমাণ ভিন্ন।

যেমন— অ্যাসোসিয়েট প্রেসের মতে বাইডেন অন্তত ২৬৪টি ভোট এর মধ্যেই পেয়ে গেছেন। তাদের মতে ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি ভোট। কিন্তু বিবিসি বলছে, বাইডেনের ভোটের পরিমাণ ২৫৪টি, এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি।

এর মধ্যে জর্জিয়ার ভোট আবার গণনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যটিতে ১৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। ৯৯ শতাংশ ভোট গণনার পর বাইডেন পেয়েছেন ৪৯.৪ শতাংশ ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯.৩ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ দুজনের ভোট প্রাপ্তির ব্যবধান খুবই সামান্য। ব্যবধান এতো কম হওয়ায় আবার ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ দিকে আরো কিছু রাজ্যে ভোট গণনায় বেশ সময় লেগে যাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো বিপুল সংখ্যক ভোট প্রদান করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় ডাক ব্যবস্থায়। মহামারীর কারণে বহু লোক আগাম ভোট দিয়েছেন। ডাকের মাধ্যমে সেই সব ভোট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাতে সময় লাগছে বা গণনা করতে সময় লাগছে। ফলে কোনো কোনো রাজ্যে এখনই ভোট গণনা চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে রাজ্যভেদে ভোট গণনার ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম আছে। গণনাকারিদের সেই সব নিয়মও যথাযথভাবে পালন করতে হচ্ছে।

পপুলার ভোটে কি বাইডেন এগিয়ে নন?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহু লোক এই প্রশ্ন করছেন যে, জনগণের ভোটে কি বাইডেন এগিয়ে যাননি— উত্তর হলো, হ্যা। পপুলার ভোটে বাইডেন বেশ এগিয়ে গেছেন। কিন্তু এই এগিয়ে থাকাই এটা নিশ্চিত করে না যে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। পপুলার ভোট যতোই পান না কেনো, ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের পরিমাণ ২৭০টি না হলে কোনো প্রার্থীর পক্ষে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব নয়।

আমেরিকার নির্বাচনে মোট ইলেক্টোরাল ভোটের পরিমাণ হলো ৫৩৮টি। কোনো প্রার্থীকে জয়ী হতে হলে পেতে হবে অন্তত ২৭০টি ভোট। শেষ পর্যন্ত বিজয়ী তিনিই হবেন, যার পক্ষে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পড়বে। সুতরাং পপুলার ভোটে এগিয়ে থাকা এখনই বাইডেনের জয় নিশ্চিত করতে পারছে না।

এখনো কিসের অপেক্ষা?

বিবিসির হিসেবে বাইডেন পেয়েছেন ২৫৪টি ইলেক্টোরাল ভোট, আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি। এই অবস্থায় বাকি থাকা ভোটের হিসেবে দুজনই কোনো না কোনোভাবে ২৭০ ভোট পেতে পারেন। বাকি থাকা রাজ্যগুলোর মধ্যে নেভাদায় ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে, সেখানে বেশ এগিয়ে আছেন বাইডেন। শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হলে এই রাজ্য থেকে ছয়টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন। এই রাজ্যে ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা খুবই কম। এরপর জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়াতেও যথাক্রমে ১৬ ও ২০টি ভোট রয়েছে। এগুলো কার পক্ষে যাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

সুতরাং এখন পর্যন্ত এই রাজ্যগুলোর ভোট শেষ পর্যন্ত কার পক্ষে যায়, তা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আমেরিকা। সেই সাথে অপেক্ষা করে আছে পৃথিবীর আরো অনেক দেশের কোটি কোটি মানুষ। কৌতুহলী এই অপেক্ষা কখন শেষ হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলার সুযোগ আসলেই নেই।