রুশ-মার্কিন যুদ্ধের পটভূমি প্রস্তুত!

রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে যুদ্ধের পটভূমি প্রস্তুত হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কয়েকদিনের মধ্যে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ কিছু ঘটনা দুই পরাশক্তির মধ্যে আবশ্যিক যুদ্ধকে ইঙ্গিত করছে।

রুশ-মার্কিন যুদ্ধের পটভূমি প্রস্তুত

একজন শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সেনা কমান্ডার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। সে যুদ্ধ ‘অত্যাসন্ন’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাশিয়ার বিরোধী নেতা নাভালনির গ্রেপ্তার নিয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার একাট্টা অবস্থানের বিপক্ষে কঠোর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নাভালনিকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার যে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তা প্রত্যাখ্যান করে মস্কো বলেছে, এ ধরনের আল্টিমেটাম ‘আক্রমণাত্মক বাগাড়ম্বর’। এ ধরনের বক্তব্য আর সহ্য করা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া।

এ উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলেছে রাশিয়া থেকে তিন ইউরোপীয় কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘটনা। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইউরোপের নেতারা বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

মার্কিন নেভাল ইনস্টিটিউটের মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীর কৌশলগত কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল চার্লস রিচার্ড সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।

মস্কো ‘আগ্রাসীভাবে আন্তর্জাতিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ’ করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অ্যাডমিরাল রিচার্ড বলেন, রাশিয়া তার দেশসহ গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই মার্কিন অ্যাডমিরাল আরও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার আঞ্চলিক উত্তেজনা দ্রুত সংঘাতে রূপ নিতে পারে। আর সেরকম কিছু হলে পারমাণবিক যুদ্ধ অত্যাসন্ন হয়ে পড়বে।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার সরকারবিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করে মস্কো বলেছে, এ ধরনের আল্টিমেটাম রাশিয়ার দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য।

রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শুক্রবার মস্কোয় এক বক্তব্যে এ কথা বলেন। বাইডেনের রুশ বিরোধী বক্তব্যকে তিনি ‘আক্রমণাত্মক বাগাড়ম্বর’ ও ‘অগঠনমূলক’ বলে বর্ণনা করেন। পেসকভ বলেন, ওয়াশিংটন মস্কোকে যে আল্টিমেটাম দিয়েছে তার পুনরাবৃত্তি সহ্য করা হবে না।

এদিকে, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে দেশটি থেকে তিন ইউরোপীয় দেশের কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই তিন দেশ সুইডেন, পোল্যান্ড ও জার্মানির পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার ঘোষণা করে, সে দেশের সরকারবিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির সমর্থনে মস্কোয় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করার অভিযোগে তিন ইউরোপীয় দেশের তিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই তিন কূটনীতিককে রাশিয়ায় ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাদেরকে অবিলম্বে রাশিয়া ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইউরোপীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কারাদেশের ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ার এ পদক্ষেপের কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে না এবং মস্কোর বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে স্টকহোম। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ার এ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ওয়ারশ থেকে একজন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হবে। অন্যদিকে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল তার দেশের কূটনীতিক বহিষ্কারের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আইনের শাসনের পরিপন্থি।

প্রসঙ্গত, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া নিয়ে যে নমনীয় মনোভাব পোষণ করতেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট সেটা করবেন না বলে বিশ্লেষকরা আভাস দিয়ে রেখেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর বাইডেনের সঙ্গে পুতিনের যে ফোনালাপ হয়, তা-ও উত্তপ্ত ছিল বলে দুই প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।