দুবাই আমিরের মেয়ে লতিফা বেঁচে আছেন?

দুবাইয়ের আমির শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের মেয়ে শেইখা লতিফার বেঁচে থাকার প্রমাণ চেয়েছে ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’। বেঁচে থাকলে তাকে দ্রুত মুক্তি দিতে দুবাইর ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ভিডিও ফুটেজে তাকে ‘চরম দুর্দশাগ্রস্ত’ দেখা যাওয়ার পর এ আহ্বান এলো।

শেইখা লতিফা

২০১৮ সালে সমুদ্রপথে আরব আমিরাত পালানোর চেষ্টা করার পর লতিফাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। পরে বন্ধুদের কাছে একটি ভিডিও বার্তা পাঠান, যেখানে তিনি নিজের পিতার বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছেন যে, তাকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে এবং তিনি নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ভিডিও নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এটাকে লোমহর্ষক ফুটেজ বলে বর্ণনা করেছেন।

বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানকে দেওয়া ওই ফুটেজে ৩৫ বছর বয়সী লতিফা আল মাকতুম বলেন, তিনি বোটে করে পালিয়ে যাওয়ার পর কমান্ডোরা তাকে মাদকাচ্ছন্ন করে এবং আবার তাকে বন্দিশালায় নিয়ে আসে।

গোপনে পাঠানো বার্তাগুলো আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার বন্ধুরা জাতিসংঘকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

দুবাই এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এর আগে জানিয়েছিল যে, তিনি তার পরিবারের তত্ত্বাবধানে নিরাপদেই আছেন।

জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকার কমিশনার ও আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, যিনি ২০১৮ সালে রাজকুমারীর সঙ্গে দেখা করার পর তাকে একজন ‘বিপদগ্রস্ত তরুণী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন, এখন তিনি বলছেন, লতিফার পরিবার তাকে ‘ভয়াবহভাবে ধোঁকা দিয়েছিল।’

রবিনসন বললেন, ‘লতিফার বিষয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’

লতিফাকে আটক করার পর দুবাইয়ে ফেরত নেওয়ার বছর খানেক পর তাকে গোপনে দেওয়া একটি ফোনে কয়েক মাস ধরে ওই ভিডিওগুলো রেকর্ড করা হয়েছিল। তিনি ওয়াশরুমে বসে সেগুলো রেকর্ড করেছিলেন, কারণ সেটিই ছিল একমাত্র কক্ষ, যেটির দরজা তিনি বন্ধ করতে পারতেন।

ভিডিওতে তিনি জানিয়েছেন, ‘নৌকা থেকে যে সেনারা তাকে আটক করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন তিনি, তাদের লাথি মেরেছিলেন এবং তাদের সঙ্গে মারামারি করেছিলেন এবং আমিরাতের এক কমান্ডোর হাতে চিৎকার না করা পর্যন্ত কামড়ে ধরেছিলেন।

তাকে অচেতন করার ওষুধ দেওয়ার পর তিনি চেতনা হারান এবং তাকে একটি ব্যক্তিগত বিমানে তোলা হয়। সেটি দুবাইয়ে অবতরণের আগ পর্যন্ত অচেতন অবস্থায় ছিলেন তিনি।

প্যানোরামার কাছে লতিফার আটক হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু টিনা জাওহিআইনেন, মায়ের দিককার এক ভাই মার্কাস এসাব্রি এবং প্রচারকর্মী ডেভিড হেই। এরা সবাই লতিফাকে মুক্ত করার প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত।

তারা বলেন, লতিফার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তারা এখন এ ভিডিও বার্তাগুলো প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তারা দুবাইয়ে ওই ‘ভিলায়’ বন্দী লতিফার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছিলেন, পুলিশ পাহারায় যে বাড়ির জানালাগুলো বাইরে থেকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

এদিকে, আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদের মেয়ে লতিফাকে আটকে রাখার প্রসঙ্গ তোলা হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় দুবাইয়ের শাসকের মেয়ের বিষয়ে আমিরাতকে জিজ্ঞাসা করা হবে বলে ইঙ্গিত দেয়।

প্রিন্সেস লতিফার ভিডিও পর্যালোচনা শেষে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রারি ডিটেনশন এ সংক্রান্ত একটি তদন্তের শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।