নতুন কৌশলে এগোতে চাচ্ছে তুরস্ক
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মাঝারি শক্তির পোশাক পরে উদারপন্থা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে তুরস্ক। চীন কিংবা রাশিয়ার বলয়ে নিজেকে সোপর্দ না করে উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে তুরস্ককে তুলে ধরতে চাচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। শাসনব্যবস্থা ও মানবাধিকার ইস্যুগুলোর সংস্কারেও হাত দিতে পারেন তিনি। আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্ঘাতে না গিয়ে তিনি এ পন্থাকেই বেছে নিতে যাচ্ছেন।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান
বিশ্লেষকদের ধারণা, এরদোয়ানের কাছে বিকল্প নেই। উদারপন্থা নিয়ে এগোলে তুরস্কের আগামী দিনের বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধন করা সহজ হবে।
সম্প্রতি তুর্কি কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যে দেশটির নতুন কৌশলের আভাস পাওয়া গেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার আভাস দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া অনুযায়ী রুশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ‘এস-৪০০’-এর পূর্ণাঙ্গ মোতায়েন থেকে বিরত থাকতে পারে তুরস্ক।
তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের সঙ্গে সম্পৃক্ত তুরস্কের দুই কর্মকর্তা বলেছেন, আঙ্কারা ছাড় দিতে প্রস্তুত। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি সমরাস্ত্র ব্যবস্থার খুচরা যন্ত্রাংশের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চান, তুরস্কের অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চান।
এরদোয়ানও বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চান জানিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের যতটা না মতানৈক্য রয়েছে, তার চেয়ে বেশি রয়েছে অভিন্ন স্বার্থ। তিনি বলেন, ‘উইন-উইন ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চাই। অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি শক্ত ও সমন্বিত কৌশলগত মিত্রতা রয়েছে। মতানৈক্যের পরও দুই দেশ একসঙ্গে সব বাধা অতিক্রম করেছে।’
এদিকে, এফ-৩৫ ফাইটার জেট প্রোগ্রামে নিজেদের অধিকার রক্ষায় তদবির করতে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এক আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে তুরস্ক।
তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য: তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবস্থাটা ভালো নয়। ধারণা করা হয়েছিল, বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এ সম্পর্কের সুন্দর একটি অবয়ব তৈরি হবে। না, তা হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসন যে ভাষায় কথা বলছিল তুরস্ক নিয়ে, বাইডেনের ভাষাও প্রায় একই।
মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে বেশ সরব হয়ে ওঠেন এরদোয়ান। সম্প্রতি ইরাকে মার্কিন মদতপুষ্ট পিকেকে গোষ্ঠির হাতে ১৩ তুর্কি নাগরিক নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে এরদোয়ান বলেন, ‘আপনি যদি আমাদের বৈশি^ক জোট ও ন্যাটোতে আমাদের সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চান, আপনাকে সন্ত্রাসীদের পাশে থাকা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেন আমলে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের শুরুটা ভালো হয়নি। এখন, দুই দেশেরই উচিত হবে যোগাযোগের পথ খোলা রাখা। দুই দেশের ভবিষ্যতের জন্যই সম্পর্ক উষ্ণ রাখা জরুরি।
শপথ নেওয়ার প্রথম ২৫ দিনে তুরস্কের বিষয়ে সাতটি বিবৃতি দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এতে মানবাধিকার ও এস-ফোর হান্ড্রেড প্রসঙ্গ এসেছে। ট্রাম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়া চলার সময়ই তুরস্কের বিরুদ্ধে ৫৪ সিনেটরের ড্রাফট করা কর্কশ ভাষার একটি চিঠি এসেছে। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে স্বাক্ষরের জন্য তুরস্কের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় চিঠি উন্মুক্ত করা হয়েছে। কেবল এক সপ্তাহের মধ্যে তুরস্কের বিরুদ্ধে দুটি চিঠি তৈরি হলো মার্কিন পার্লামেন্টে। তুরস্কের বিরুদ্ধে আইন ও মানবাধিকার-বিষয়ক এ জাতীয় বিবৃতি ক্যাপিটল থেকে আগেও এসেছে। কিন্তু এত দ্রুততার সঙ্গে নয়। মনে হচ্ছে, মার্কিন কংগ্রেসের চোখে তুরস্কের পরিস্থিতি দিনদিন খারাপ হচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা বলেছেন, মাঝারি আকারের শক্তি তুরস্ক। ‘রিজিলিয়ান্ট মিডল পাওয়ার গ্রান্ড স্ট্র্যাটেজি’ নিতে হবে দেশটিকে, যাতে সামনের বছরগুলোতে জাতীয় স্বার্থগুলো যথাযথভাবে কাজ করে।
তারা বলেছেন, বাস্তবিক প্রেক্ষিত থেকে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ যদি দেশটির ‘হার্ড পাওয়ার’ সক্ষমতাগুলোতে বিনিয়োগ করা অব্যাহত রাখে, একই সঙ্গে বৈশি^ক রাজনীতিতে উদারপন্থি ‘কান্তিয়ান’ মূলনীতি মজবুত করতে কাজ করে, তাহলে চলমান সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার সক্ষমতা বাড়বে। বিশেষ করে বিশে^র ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণে তুরস্কের সামর্থ্য আরও শক্তিশালী হবে।
মনে হচ্ছে, বাইডেন এবং তার দল আপাতত বিশ^কে বিভক্ত করে প্রভাব বলয় তৈরির ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করবেন। বিশেষ করে মার্কিন ক্যাপিটলে জঘন্য হামলার পর নিজের ঘরে উদার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবেন। সফট পাওয়ারের মাধ্যমে মলিন মর্যাদাই শুধু পুনরুদ্ধার করবেন না, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘কান্তিয়ান’ মূলনীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে অনেক মাঝারি শক্তিকে এতে উৎসাহিত করবেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট কিংবা নীতি নির্ধারণী কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনকে গুরুত্ব দিয়ে তুরস্ককে উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছেন তারা।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.