আপনি পড়ছেন

উইঘুরদের মতো তিব্বতিরাও ভয়াবহ নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট লবসাং স্যাংগে। তিনি বলেছেন, তিব্বতকে জোরপূর্বকভাবে নিজেদের প্রদেশ করে তোলা এবং তিব্বতিদের চায়নিজ হিসেবে রূপান্তরের চেষ্টা করে যাচ্ছে চীন। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে অভিযোগগুলো করেন তিব্বতের ধর্মীয় গুরু দালাই লামার অনুসারী নির্বাসন সরকারের প্রেসিডেন্ট স্যাংগে।

tibetans see repeat of own repression in china s treatment of uyghurs copy

সাক্ষাতকারে স্যাংগে বলেন, ‘আমরা সবসময়ই স্মরণ করি যে যখনই চীনের ‘সংখ্যালঘুদের’ প্রসঙ্গ আসবে তখন তিব্বতের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরা হয় না।’

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে শিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের ওপর যে নির্যাতন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র সমালোচনা চলছে এর অনেক পদ্ধতিই সর্বপ্রথম তিব্বতে প্রয়োগ করা হয়েছিলো। শিনজিয়াংয়ে ১০ লাখের বেশি উইঘুরকে সংশোধনী ক্যাম্পে রাখার নামে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

ট্রাম্প ও বাইডেন প্রশাসন উভয়েই উইঘুরদের প্রতি চীনের দমন-নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে। এ প্রসঙ্গে স্যাংগে বলেন, ‘পুরোপুরি একইরকম নয় তবে তিব্বতেও এ ধরনের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিলো।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, চীন সরকার তিব্বতের পরিবারগুলো থেকে পাঁচ লাখ তরুনকে আলাদা করে দূরবর্তী অঞ্চলে সরিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের আরবান সেন্টারে স্থানান্তরিত করে সামরিক ঘরানার প্রশিক্ষণ গ্রহণে বাধ্য করা হয়। নিজেদের কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে সেসময় চীন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় তিব্বতিরা খুবই অলস প্রকৃতির; এদেরকে দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।

চীন সরকারের জন্য এটি ‘দারিদ্র বিমোচন’ কর্মসূচি হলেও আমাদের জন্য তা সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ: তিব্বতকে চীনের প্রদেশে রূপান্তরিত করা এবং এর জনগোষ্ঠীকে চায়নিজ হিসেবে গড়ে তোলা। তিব্বতের কতজন তরুনকে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে তার কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে চীন কর্তৃপক্ষ।

প্রবাসী তিব্বতিরা একে দখলকৃত রাষ্ট্র হিসেবে দেখছে। ২০০০ সালের শুরুর দিকে চীনের ক্ষমতাসীন দল ডকুমেন্ট -৫ নামে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে। যেখানে সকল বৌদ্ধ লামাকে নিবন্ধন করানোর নির্দেশ দেয়া হয় এবং সরকারের অনুমোদন ছাড়া তাদেরকে ধর্মীয় চর্চা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের মানবাধিকার নিয়ে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন সরকার তিব্বতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। বিনা কারণে গ্রেপ্তার, আটক রাখা এবং রাজতৈক বন্দীদের নির্যাতন সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে।

চীনে তিব্বতিরা ‘খুবই কষ্টকর’ অবস্থায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন স্যাংগি। চীনের সরকার দলীয়দের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বা সংঘবদ্ধ হলে সঙ্গে সঙ্গেই ধরপাকড় করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়; অনেকে কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন। এসব কারণে অনেক তিব্বতিই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

স্যাংগে সাক্ষাতকারে দাবি করে বলেন, নির্বাসন সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদ ‘ভালোই ছিলো।’

ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণীত আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দালাই লামাসহ তিব্বতের নেতাদের উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা চীন সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তিব্বতের বৌদ্ধদের ওপর ন্যাস্ত করা উচিত। এই আইনটিতে স্বায়ত্তশাসিত তিব্বতের রাজধানী লাসায় একটি মার্কিন কনস্যুলেট স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে।

এ আইনটিকে স্যাংগি তিব্বতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলার ‘বড় শক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালে চীনের সেনাদের মাধ্যমে দখল হওয়ার আগ পর্যন্ত তিব্বত হিমালয় অঞ্চলের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিলো। দালাই লামা ভারতে পালিয়ে গেলে তিব্বতে নির্বাসিত সরকার পরিচালিত হচ্ছে।

সমালোচকরা বরাবরই অভিযোগ করে বলেন, চীনের কমিউনিস্ট সরকার দশকের পর দশক ধরে একটি কৌশলগত কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে তিব্বতিদের হ্যান চায়নিজ সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে এবং তিব্বতের ধর্মীয় ও সংস্কারের সমস্ত চিহ্ন ধীরে ধীরে মুছে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তিব্বতের এই বিষয়গুলো পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর নজরে আসেনি বলে তা চাপা রয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্যাংগি।

সূত্র: ওয়াশিংটন টাইমস

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.