নিউজিল্যান্ডের শাপমোচন

আইসিসির বড় কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ নিউজিল্যান্ডের জন্মলগ্ন থেকে। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বাধাভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠার কথা কিউইদের। কিন্তু আবেগ তো স্পর্শ করতে পারে না কেন উইলিয়ামসনকে। তার উদযাপনে থাকল পরিমিতবোধ। উইকেটে কেনের সঙ্গী রস টেলরও বুনে উল্লাসে মেতে ওঠেননি। আট-দশটা ম্যাচ জয়ের উদযাপন করলেন তিনিও।

বাইশ গজে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান না হয় স্বপ্নপূরণের আবেগটাকে পুরোপুরি চেপে রেখেছেন। কিন্তু অন্যরা? উৎসবে মেতে ওঠেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। ড্রেসিংরুম কিংবা গ্যালারি- প্রায় বুনো উল্লাসে মাতোয়ারা কিউইরা। তাদের এই উৎসব প্রথমবারের মতো আইসিসির বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির ফাইনালে হারা দলটা শাপমোচন করল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ জিতে।

বুধবার বিরাট কোহলির ভারতকে আট উইকেটে হারিয়ে আইসিসি টেস্ট সেরা দলের মুকুট পরলেন উইলিয়ামসন অ্যান্ড কোং। ষষ্ঠ তথা শেষ দিনে ভারতকে নাগালেই বেঁধে ফেলে কিউইরা। ১৩৮ রানের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে শুরুতে একটু বেগ পেতে হয়েছে। হারাতে হয়েছে জোড়া উইকেট। পরে উইলিয়ামসন-টেলরের নির্ভরযোগ্য ৯৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির ওপর দাঁড়িয়ে শিরোপা জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।

তাতেই শেষ হলো দুই বছরের পথচলা। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফাইনালের শেষ দিনের শেষ সেশনে এসে স্বপ্নপূরণ। ২১ বছর পর আরেকটি ট্রফি এলো তাদের ঘরে। সবশেষ ২০০০ সালে নকআউট বিশ্বকাপ জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। যা বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হিসেবে পরিচিত। এরপর আর শিরোপা জেতা হয়নি তাদের। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার। সবশেষ দুই বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে স্বপ্ন হাতছাড়া।

তৃতীয়বার আর ভুলটা হয়নি নিউজিল্যান্ডের। দাপুটে বোলিংয়ে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস তারা থামিয়ে দিয়েছে ১৭০ রানে। প্রথম ইনিংসে কোহলি অ্যান্ড কোং করেন ২১৭ রান। জবাবে কিউইরা করে ২৪৯ রান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বৃষ্টিভেজা ফাইনালের দুইদিন খেলা না হলেও নিউজিল্যান্ডের জয় ঠেকাতে পারেনি তা। ম্যাচ গড়ায় রিজার্ভ ডেতে। ষষ্ঠ দিনেই হলো শ্রেষ্ঠত্বের মীমাংসা।

নিউজিল্যান্ড পেসারদের দাপটে প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি পাননি ভারতের কোনো ব্যাটসম্যান। ধারাটা অব্যাহত থাকল দ্বিতীয় ইনিংসেও। ফিরতি ইনিংসে ভারতীয়দের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন ঋষভ পন্ত। পঞ্চম দিনই ৩০ রানে ফিরেছেন রোহিত শর্মা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৬ রান এসেছে রবিন্দ্র জাদেজার ব্যাট থেকে। চার উইকেট নিয়ে ভারতকে ধসিয়ে দিয়েছেন টিম সাউদি। ট্রেন্ট বোল্টের শিকার তিনটি। দুটি কাইল জেমিসনের এবং অন্যটা নিল ওয়াগনারের। দুই ইনিংসে সাত উইকেট নিয়ে ফাইনাল সেরা হয়েছেন জেমিসন। 

লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৪ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় নিউজিল্যান্ড। টম লাথাম আউট হয়েছেন দশকের ঘরে যাওয়ার আগেই। ১৯ রানে ফিরেছেন ডেভন কনওয়ে। পরে দলকে নির্ভার করেন উইলিয়ামসন ও টেলর। আদর্শ টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করে প্রথমজন ৫২ রানে অজেয় থাকেন। দ্বিতীয়জন তিন রানের জন্য অর্ধশতক পাননি। কিউইদের পতন হওয়া দুই উইকেট নিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।