পেশোয়ারকে কাঁদিয়ে শিরোপা মুলতানের

টি-টোয়েন্টি সংস্করণে লক্ষ্যমাত্রা দুশো ছাড়িয়ে গেলে আসলে কিছু করার থাকে না। হিমালয়তুল্য সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোটা অবিশ্বাস্য কিছু। খুব স্বাভাবিকভাবেই রূপকথা প্রতিদিন হয় না। কালেভদ্রে ছাড়া দুশোর বেশি রান তাড়া করেও জেতা যায় না। পেশোয়ার জালমিও তাই পারেনি। আবুধাবিতে মুলতান সুলতান্সের ২০৬ রানের জবাব দিতে নেমে পেশোয়ার হেরেছে ৪৭ রানে।

মুলতানের অধিনায়ক রিজওয়ানের মুখে চওড়া হাসি

রাজসিক এই জয়ে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) শিরোপা জিতে নিল মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল। টুর্নামেন্টে এটা মুলতানের প্রথম ট্রফি। সবমিলিয়ে ছয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হলো পাঁচটি আলাদা দল। সবচেয়ে বেশি দুবার পিএসএল জিতেছে ইসলামাবাদ ইউনাইটেড। সবচেয়ে বেশি পাঁচবার ফাইনাল খেলেছে পেশোয়ার জালমি। তন্মধ্যে চার মৌসুমে তিনবার ফাইনাল হারল তারা।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাতে ফাইনালটার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেছে ম্যাচের প্রথম ভাগেই। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত কুড়ি ওভারে চার উইকেটে ২০৬ রান করে মুলতান সুলতান্স। লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৫৯ রান তুলতে সক্ষম হয় পেশোয়ার জালমি। এ নিয়ে টানা তিনটি ফাইনাল হারল পেশোয়ার। ২০১৭ সালে প্রথমবার ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করে দলটি।

মুলতান সুলতান্সের রানপাহাড়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। তাতে ওপেনার শান মাসুদ ও অধিনায়ক রিজওয়ানের অবদান যৎসামান্যই। দুজনই ব্যাট করেছেন টি-টোয়েন্টি ধারার প্রতিকূলে। মাসুদ ২৯ বলে ছয় চারে করেছেন ৩৭ রান। তার সঙ্গী রিজওয়ান তো প্রস্তর যুগের ব্যাটিং করেছেন। ৩০ বলে ৩০ রানে ফেরেন মুলতান্সের অধিনায়ক-উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।

দুই ওপেনারের মন্থর গতির ব্যাটিং পুষিয়ে দিয়েছেন সোয়েব মাকসুদ ও রাইলি রুশো। দুজনের ব্যাটেই ওঠে মহাপ্রলয়। ৩৫ বলে ৬৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে অজেয় থাকেন মাকসুদ। ইনিংসে ছয়টি চারের সঙ্গে তিনটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। রাইলি রুশো ২১ বলে ৫০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরেছেন। এই দক্ষিণ আফ্রিকান ইনিংস সাজান পাঁচটি চার ও তিন ছক্কায়।

শেষ দিকে পাঁচ বলে ১৫ রানের ক্যামিও ইনিংসে অপরাজিত থাকেন খুশদিল। তার ইনিংসে ছিল দুটি ওভার বাউন্ডারি। মুলতান সুলতান্সের পতন হওয়া চার উইকেটের দুটি করে নিয়েছেন শামীম গুল ও মোহাম্মদ ইমরান। পেশোয়ার জালমির বোলাররা লক্ষ্য নাগালে রাখতে পারেননি। দারুণ কিছু করতে পারেননি ব্যাটসম্যানরাও। ফাইনাল হারের দুষ্টচক্র থেকেও তাই বের হতে পারল না পেশোয়ার।

পাহাড়সম লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা অবশ্য করেছিল ওয়াহাব রিয়াজের দল। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে এসেই থামতে হলো। বিনা উইকেটে ৪২ থাকা দলটা পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট হারালো কোনো রান না করেই। এই জোড়া ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি পেশোয়ার। শোয়েব মালিক ও কামরান আকমলের ইনিংস দুটি তাই হারের ব্যবধান কমাতে কাজে লেগেছে মাত্র।

২৮ বলে ৩৬ রানে ফিরেছেন আকমল ভাইদের বড় জন। সমান বলে তিনটি করে চার-ছক্কায় ৪৮ রানে আউট হন শোয়েব। মিডল অর্ডারে তার সঙ্গী রভমান পাওয়েল ১৪ বলে ২৩ রানে সাজঘরের পথ ধরেন। শেরফান রাদারফোর্ড ১০ বলে ১৮ রান করেন। ইমরান খান ও ব্লেসিং মুজারাবানি দুটি করে উইকেট নিয়ে পেশোয়ার জালমির টপ অর্ডারে ধস নামিয়েছেন। আর ১৭তম ওভারে বোলিং করতে এসে তিন উইকেট নিয়ে লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ইমরান তাহির।

ফাইনাল শুরুর আগেই বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে পেশোয়ার জালমি। জৈব-সুরক্ষা বলয়ের নিয়ম ভেঙে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ থেকে নিষিদ্ধ হন তাদের দুই ক্রিকেটার হায়দার আলি ও উমাইদ আসিফ। দুজনকে নিষিদ্ধ করে পেশোয়ার জালমিকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। সেই পরীক্ষায় শতভাগ ব্যর্থ ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। নিষিদ্ধ দুই ক্রিকেটারের শূন্যতা ভালোই পুড়িয়েছে তাদের।