মাহমুদ-তাসকিনের মঞ্চে জিম্বাবুয়ের জবাব

প্রত্যাশার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে মাহমুদউল্লাদ রিয়াদ ও তাসকিন আহমেদের নবম উইকেট জুটি। প্রথমজন অজেয় থাকলেন দেড় শ রানে। দ্বিতীয়জনের রূপকথার ইনিংসটা থেমেছে ৭৫ রানে। সঙ্গে লিটন দাসের আফসোস জাগানিয়া ইনিংস ও মুমিনুল হকের স্বভাব সুলভ ব্যাটিং। সবমিলিয়ে স্বপ্নের একটা ইনিংস শেষ হলো বাংলাদেশের।

বৃহস্পতিবার হারারে টেস্টের দ্বিতীয় দিন টাইগাররা থেমেছে ৪৬৮ রানের পাহাড় গড়ে। জবাবটা শক্ত হাতেই দিচ্ছে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। দিনের খেলা শেষে এক উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান করেছে তারা। বাংলাদেশের চেয়ে এখনো ৩৫৪ রান রান পিছিয়ে আছে জিম্বাবুইয়ানরা। তাদের একমাত্র উইকেটের পতন হয়েছে দলীয় ৬১ রানে।

৮৩ বলে ৪১ রানে ফিরে গেছেন ওপেনার মিল্টন শুম্বা। তাকে এলবির ফাঁদে ফেলেন সাকিব আল হাসান। দিন শেষে টিকে আছেন তাকুদজভানাশে কায়তানো ও ব্রেন্ডন টেলর। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৫৩ রানের। আদর্শ টেস্ট মেজাজে ব্যাট করে তায়কানো ১১৭ বলে ৩৩ রানে অজেয় আছেন। প্রায় ওয়ানডে মেজাজে খেলা টেলর ৪৬ বলে ছয় চারে করেন ৩৭ রান।

কিন্তু দিনের প্রাদ প্রদীপের পুরো আলোটা গিয়ে পড়ল মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিনের ওপর। দুজন যোগ করেন ১৯১ রান। নবম উইকট জুটিতে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। আগের জুটিতেও ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ১৮৪ রানের সেই জুটিতে তার সঙ্গী ছিলেন অভিষিক্ত আবুল হাসান। অল্পের জন্য অবশ্য আজ বিশ্ব রেকর্ডটা ছোঁয়া হয়নি তাদের। ব্যবধান মাত্র চার রানের।

তাই ২৩ বছর আগের রেকর্ডটাই টিকে থাকল। ১৯৯৮ সলে জোহানেসবার্গ টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে নবম উইকেটে ১৯৫ রানের জুটি গড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার ও প্যাট সিমকক্স। মাহমুদ-তাসকিন প্রায় অবিশ্বাস্য জুটির আফসোস এখানেই। তবে এই দুজন ছাড়িয়ে গেছেন ১৯৬৭ সালে ইন্তিখাব আলম ও আসিফ ইকবালের গড়া ১৯০ রানের জুটি।

অবিস্মরণীয় জুটি ভেঙেছে তাসকিন বোল্ড হলে। ১৩৫ বলে ১১ চারে ৭৫ রান করেন টাইগার পেসার। খানেকবাদে তার পথ ধরলেন শেষ ব্যাটসম্যান ইবাদত হোসেনও। মাহমুদউল্লাহ অপর প্রান্তে অপরাজিত থাকলেন ১৫০ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে তার আগে আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দেড় শ রানের নজির মাত্র চারজনই গড়তে পেরেছিলেন। তন্মধ্যে পাকিস্তানেরই তিনজন।

তারা হলেন ওয়াসিম আকরাম (২৫৭), ইমতিয়াজ আহমেদ (২০৯), জেসন হোল্ডার (২০২) এবং কামরান আকমল (১৫৪)। তাসকিন আউট না হলে অন্তত শেষজনকে পেছনে ফেলতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ। অথচ এই টেস্টে তার খেলারই কথা ছিল না তার। টেস্ট দল ঘোষণার তিনদিন পর তাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয় দলে।

দেড় বছর পর টেস্টে ফিরেই মাহমুদউল্লাহ জানিয়ে দিলেন ফুরিয়ে যাননি তিনি। এখনো টেস্ট ক্রিকেটকে কিছু দেওয়ার বাকি আছে তার। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে বিপর্যয় সামলে বাংলাদেশ উঠেছে রানের পাহাড়ে। দলকে কক্ষপথে নেওয়ার পাশাপাশি মাহমুদ তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি।

মাহমুদউল্লাহর এমন ব্যাটিং অবশ্য প্রত্যাশিতই। কিন্তু তাসকিনের ব্যাটিং জাগাল বিস্ময়। তার চোখ ধাঁধানো শটগুলো দেখে কে বলবে তিনি মূলত ব্যাটসম্যান! দারুণ ব্যাটিংয়ের সময়েই তার সঙ্গে কথার লড়াই শুরু হয় মুজারাবানির। দুজন মুখোমুখিও হয়েছিলেন। তাতে তাসকিন যেন আরো ক্ষুব্ধ হলেন। পরের তিন ওভারেই জিম্বাবুইয়ান পেসারকে সীমানা ছাড়া করলেন তিনি।

তাসকিন আউট হয়ে যেতে পারতেন ব্যক্তিগত ৩২ রানেই। কিন্তু ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান। এরপরই ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটা খেললেন তিনি। তার আগের সেরা ছিল ৩৩ রান।