আপনি পড়ছেন

সম্প্রতি মার্কিন একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের ছয় মাসের মধ্যে পতন হতে পারে কাবুলের। তালেবান যে গতিতে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে এর আগেই কাবুলের দখল তাদের হাতে চলে গেলে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না।

afghan interpreterহাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকলেও এসব দোভাষী ছাড়া বিদেশি সেনারা ছিল অসহায়

এ অবস্থায় নিজেদের বড় ধরনের বিপদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন আফগান দোভাষীরা, যারা জীবিকার জন্য এক সময় দোভাষী হিসাবে বা অন্যান্য সহকারীর ভূমিকায় পশ্চিমা সৈন্যদের সাহায্যে কাজ করেছেন। পশ্চিমা বিভিন্ন এনজিও ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধি হিসাবে যারা কাজ করছেন তারাও দেশ ছাড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

দীর্ঘ ২০ বছর আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে আছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ব্রিটেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়ার সেনারা অভিযানে অংশ নেয়। কিন্তু ভাষার দূরত্বের কারণে তাদের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল আফগান দোভাষীদের। অনেকেই এ দোভাষী ছাড়া ছিলেন পুরোপুরি অচল। এ কাজ করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেছেন অনেক আফগান। বিদেশি সেনাদের সাথে সখ্য-পরিচয় থাকার সুবাদে সমাজে ছিল একটু আলাদা পরিচয়ও।

afghan interpreter with armyদোভাষী ছাড়া অনেকে এক পা যেতেও ভরসা পেতো না

কিন্তু সুখের সে সময় শেষ হয়ে গেছে। ২০ বছরের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত সব বিদেশি সৈন্য। তারা চলে যাচ্ছে আফগানিস্তানকে অরক্ষিত রেখেই। বিশেষ করে এসব দোভাষীদের। কারণ এসব দোভাষী এখন তালেবানের সামনে নিজেদের নিরাপদ বোধ করছে না। তালেবান যেভাবে নতুন নতুন জায়গা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে, তাতে ভয়ে সিটকে রয়েছেন তারা। তাদের অনেকে পরিবার নিয়ে লুকিয়ে থাকছেন। এ পরিস্থিতিতে তারা দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাইছে। তারা যে যেই দেশের সেনাদের সাথে কাজ করেছেন, সেই দেশেই আশ্রয় নিতে আগ্রহী। কিন্তু ওইসব দেশ তাদেরকে সেভাবে নিতে চাইছে না।

যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে ২০ হাজার দোভাষী যেতে চাইছে, সেখানে তারা আপাতত আড়াই হাজার দোভাষীর দায় নিতে চাইছে। গত শুক্রবার থেকে তারা এসব আফগানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে শুরু করেছে। তবে তাদের সবাইকে নিজ দেশে রাখতে আগ্রহী নয় যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে চাইছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দেনদরবার চলছে। এ অবস্থায় কপালে ভাঁজ পড়েছে মার্কিন সেনাদের দোভাষী হিসেবে কাজ করা আফগানদের।

যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি হচ্ছে, যে ২০ হাজার আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চাইছে, তাদের তাদের সবার আবেদন গৃহীত হলে, পরিবারের সদস্যসহ অন্তত এক লাখ আফগানকে যুক্তরাষ্ট্রে জায়গা দিতে হবে। তাছাড়া এই ২০ হাজারের মধ্যে অনেকে বেশ আগেই হয় কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন, না হয় বিভিন্ন অভিযোগে চাকরি হারিয়েছেন। ফলে তাদের নিয়েও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

এদিকে অন্য দেশের হয়ে কাজ করা দোভাষীদের অবস্থা আরো করুণ। তাদের ব্যবস্থাপনা আরো মন্দ। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন পর্যন্ত করেছে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। চাপের মুখে কোনো কোনো দেশ রাজি হলেও তাদেরকে নিজ দেশে আনার প্রক্রিয়াটা এত কঠিন করে রেখেছে যে, ভরসা পাচ্ছেন না আফগানরা।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দপ্তর অবশ্য বলছে, তাদের জন্য কাজ করতো এমন আফগান এবং তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে দুই হাজার ২০০ আফগানকে গত বছরে ব্রিটেনে এনে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আরো ৮০০ জনকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা বলছে, এ সংখ্যাটি অতি নগণ্য।

এতো গেল দেশের বাইরের অবস্থা। দেশের অভ্যন্তরের পরিস্থিতি এত জটিল হয়ে উঠেছে যে, ভিসা-পাসপোর্টের জন্য দূতাবাস বা অন্যান্য স্থানে যাওয়া আসা করাও শঙ্কার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘নো ওয়ান লেফট বিহাইন্ড‘ নামে মার্কিন যে এনজিও আফগানদের আশ্রয় দেয়ার পক্ষে কাজ করছে, তাদের জরিপ অনুযায়ী এখন পর্যন্ত পশ্চিমাদের হয়ে কাজ করা কমপক্ষে ৩০০ আফগান দোভাষী বা তাদের পরিবারের সদস্যরা খুন হয়েছেন।

সব মিলিয়ে দোভাষী বা তাদের মতো যারা ছিল, তাদের অবস্থা এখন শাঁখের করাতের মতোই হয়েছে। নিজেদের হজম হওয়ার মতো জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না তারা কোথাও।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.