৪-১ নাকি ৩-২

প্রান্ত সীমায় আসা সিরিজের আগে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র ও শেষ জয়টি ছিল ২০০৫ সালে; ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে। ক্রিকেটের নতুন সংস্করণ টি-টোয়েন্টিতে চারবারের দেখায় প্রতিবারই নাজুক অবস্থা হয়েছে টাইগারদের। কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপের মঞ্চে অজিদের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে বারবার।

সেই হতাশা ভুলে চলমান দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাজিমাত করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এক রকম প্রতিশোধ নিয়েছে টাইগাররা। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে প্রথমবারের মতো অজিদের অল আউট করার আক্ষেপ ঘোচায় টাইগাররা। তৃতীয় ম্যাচে আরো বড় স্বপ্নপূরণ।

প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে সিরিজ হারায় বাংলাদেশ। তাও আবার দুই ম্যাচ হাতে রেখেই! চতুর্থ ম্যাচে স্বস্তির জয়ে মান বাঁচিয়েছে অজিরা, এড়িয়েছে ধবলধোলাই। সিরিজ এখন ৩-১ ব্যবধানে দাঁড়িয়ে। আজ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে পঞ্চম ওয়ানডে শেষে সিরিজের ফলাফল কী দাঁড়াবে? ৪-১ নাকি ৩-২? সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে ম্যাচ।

প্রথম চারটি ম্যাচই হয়েছে মন্থর উইকেটে। সবকটি ম্যাচই হয়েছে লো স্কোরিং। আশ্চর্যজনক হচ্ছে- দুই দল মিলে আট ইনিংস ব্যাট করলেও ১৩১ রানের বেশি করতে পারেনি একবারও! সর্বোচ্চ সংগ্রহটা ছিল বাংলাদেশেরই। তিন বা ততোধিক টি-টোয়েন্টি সিরিজে এরচেয়ে লো স্কোরিং সিরিজ আর দেখেনি ক্রিকেট দুনিয়া। ওভার প্রতি রান ৫.৮৬।

সব রহস্য জমাট বেঁধেছে উইকেটে। এখানে ব্যাট করা দুর্বিসহ। ব্যাটসম্যানদের জন্য বধ্যভূমি হয়ে ওঠা মিরপুরের উইকেট কতটা কঠিন? সম্ভাব্য সেরা ব্যাখ্যাটাই দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান। ম্যাচের আগের দিন তিনি বলেছেন, ‘এই উইকেট অতুলনীয়। জীবনে এরচেয়ে কঠিন উইকেট দেখিনি। মিরপুরে ১২০ রান মানে অন্যখানে ১৯০ রান।’

এই ক্রিশ্চিয়ানের ব্যাটেই শেষ পর্যন্ত স্বস্তির জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গেল পরশু চতুর্থ ম্যাচে অজিদের জয় এসেছে তিন উইকেটে। বাংলাদেশকে ১০৪ রানে বেঁধে ফেলে সফরকারীরা। জিতেছে এক ওভার হাতে রেখে। ওই রান তাড়া করতেই ঘাম ছুটে গিয়েছিল হলুদ শিবিরের। ভাগ্যিস, সাকিব আল হাসানের এক ওভারে ৩০ রান নিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ান!

ব্যবধান গড়ে দিয়েছে সাকিবের দ্বিতীয় তথা অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের চতুর্থ ওভারটাই। বাঁ-হাতি স্পিনার সেদিন হজম করেছেন পাঁচটি ছক্কা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক ওভারে এতগুলো ছক্কা এবং ৩০ রান হতেই পারে। কিন্তু সিরিজের প্রেক্ষাপট ও উইকেট বিবেচনায় ক্রিশ্চিয়ানের অমন ব্যাটিং তাণ্ডব বিস্ময়কর।

সাকিবের অমন বাজে ওভারটার পরও ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে এসেছিল বাংলাদেশ। ৬৫ রানে অস্ট্রেলিয়ার ছয় উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজ-মেহেদিরা। এই ঝড়ে বিদায় নিয়েছেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ক্রিশ্চিয়ানও। শেষ পর্যন্ত অ্যাস্টন অ্যাগারের ২৭ বলে ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়ে নাটকীয় জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।

মিরপুরের উইকেট থেকে আগের ম্যাচগুলোতে ভালোই সুবিধা নিয়েছেন স্পিনাররা। কিন্তু স্পিন উইকেটে ক্রমাগত ঝড় তুলছেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। শেষ দুই ম্যাচেই চার ওভারে মাত্র নয় রান দিয়েছেন কাটার মাস্টার। তফাৎ বলতে, তৃতীয় ম্যাচে উইকেটশূন্য ছিলেন মোস্তাফিজ; আর সবশেষ ম্যাচে তার শিকার দুটি।

আজও ‘মোস্তাফিজ শো’ দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট দুনিয়া। সঙ্গে মেহেদি হাসান, শরিফুল ইসলামরা তো আছেনই। সাকিবের জন্য বল হাতে স্বরূপে ফেরার উপলক্ষ্য হতে পারে ম্যাচটা। আর সৌম্য সরকার? জিম্বাবুয়ে সিরিজে দারুণ ব্যাট করা এই বাঁ-হাতি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার ম্যাচে করেছেন ১২ রান! যা তাকে নির্বাচকদের ভাবনা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

শেষ ম্যাচটা সৌম্যর জন্য হতে পারে এসিড টেস্ট। সিরিজে তাকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছেন জস হ্যাজলউড। আজ যিনি থাকতে পারেন বিশ্রামে। সৌম্য স্বস্তি পেতে পারেন খবরটা শুনে। হ্যাজলউডের বিশ্রাম অন্যদের করে দিতে পারে সুযোগ। সিরিজে ধুঁকতে থাকাদের জন্যও এটা শেষ সুযোগ। কারণ সিরিজ শেষেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল প্রস্তুত করবে অস্ট্রেলিয়া।