ভারতে শহিদের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন ৩৮৭ মুসলিম
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে নিহত ৩৮৭ মুসলিমের শহিদের সম্মান বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। দেশটির ইতিহাস গবেষণা কাউন্সিল শহিদের তালিকা থেকে তাদের বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
মোফলা আন্দোলনের বিদ্রোহীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদ পড়তে যাওয়া এসব যোদ্ধা বর্তমানের কেরালা রাজ্যের মালাবার অঞ্চলে ১৯২১ সালে ‘মোপলা বিদ্রোহ’ নামে একটি ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। এখন থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে মালাবার অঞ্চলে ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদ হাজী, আলি মুসলিয়ারদের নেতৃত্বে এ বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল।
ওই সশস্ত্র সংগ্রামে প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল বলে প্রচলিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, যার মধ্যে ২ হাজার ৩৩৯ জন বিদ্রোহীও ছিল। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করে একটি বদ্ধ ট্রেনের কামরায় চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ৬৪ জন মারা যায়, যারা বেঁচে গিয়েছিলেন, তারাও একে অপরের পেশাব পান করে জীবন রক্ষা করতে বাধ্য হন। ১৯২১ সালের ১০ নভেম্বরের ওই ঘটনা ‘ওয়াগন ট্র্যাজেডি’ নামে ইতিহাসে পরিচিত। সেই আন্দোলনে নিহত ৩৮৭ জনকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘শহিদ’ বলতে রাজী নয় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হিস্টোরিক্যাল রিসার্চ (আইসিএইচআর)।
মোফলা বিদ্রোহে নিহতের স্মরণে টিরুর রেলস্টেশনে এ মুরালটি তৈরি করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত দিয়ে ডিকশনারি অব মার্টার্স- ইন্ডিয়াস ফ্রিডম স্ট্রাগল নামের যে গ্রন্থমালা প্রকাশ করেছিল আইসিএইচআর, তার পঞ্চম খণ্ডে মোপলা বিদ্রোহীদের শহিদই বলা হয়। কিন্তু এখন কাউন্সিলের তিন সদস্যের এক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই গ্রন্থ থেকে ৩৮৭ জন মোপলা বিদ্রোহীর নাম সরিয়ে দেয়া উচিত। তিন সদস্যের ওই কমিটির প্রধান অধ্যাপক সি. আই. আইসাক বলছেন, ১৯২১-এর ওই বিদ্রোহ কোনোভাবেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ছিল না। বরং সেটি ছিল ধর্মীয় সহিংসতা। তাই ওই বিদ্রোহকে কখনই স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ বলা যায় না।
কমিটির সিদ্ধান্তের অনুকূলে কী প্রমাণ রয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আইসাক বলেন, আমরা বহু নথি যাচাই করেছি। এর মধ্যে ব্রিটিশ প্রশাসনের নথিপত্র যেমন আছে, তেমনই আর্য সমাজের নথি রয়েছে। আবার মালাবার অঞ্চলের ডেপুটি কালেক্টরের নথিও আছে। এছাড়াও সমসাময়িক সংবাদপত্র, নানা আদালতের নথি, ইত্যাদি খতিয়ে দেখেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তবে ইতিহাসবিদরা আইসাকের এমন মন্তব্যকে অবাস্তব বলে মত দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ব্রিটিশ প্রশাসন ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদ হাজীকে একজন দস্যু বা লুটেরা বলে মনে করতো। তাই ব্রিটিশ নথি বা সেই সময়ের আদালতের চার্জশিট- যা অধ্যাপক আইসাকের কমিটি যাচাই করেছে, সেখানে এ রকম ভাষ্যই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক আশরাফ কাডাক্কাল বলেন, যে সময়ে ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদ হাজী মালাবার অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ প্রশাসনকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন, সেই সময়ে তিনি সেখানে মালয়লা নাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, মালয়লা নাদ কথাটার স্থানীয় অর্থ হল যারা মালায়লাম ভাষায় কথা বলেন, তাদের জায়গা। হাজি তার প্রশাসনের নাম খিলাফত নাম দেননি। তিনি ওই অঞ্চলে নিজস্ব অর্থব্যবস্থা চালু করেছিলেন, আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন।
ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদের পরিচিতি
স্থানীয় ইতিহাস অনুযায়ী, উত্তর কেরালার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রিটিশ বিরোধী প্রচার চালাতেন মালায়ালাম, আরবী ও কিছুটা ইংরেজি শিক্ষিত কুঞ্জাহামেদ হাজী। এ সময়ে তিনি ব্যবহার করতেন কেরালার নিজস্ব মার্শাল আর্টসের নানা কায়দা, পল্লীগান প্রভৃতি। এভাবেই তিনি গড়ে তোলেন প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের বিরাট এক বাহিনী।
১৯২০ সালের আগস্টে একটি মসজিদে হামলার পরেই সেই বাহিনী নানা দিকে ব্রিটিশ থানা ও সরকারি দপ্তরে হামলা চালায়। প্রায় এক বছর ধরে সেই লড়াইয়ের পরে ১৯২১ সালের আগস্টে ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদ ব্রিটিশদের তাড়িয়ে দিয়ে গড়ে তোলেন তার নিজস্ব প্রশাসন। কিন্তু মাস ছয়েকের মধ্যে গ্রেপ্তার হন তিনি। গুলি করে মেরে ফেলা হয় তাকে।
কুঞ্জাহামেদ হাজীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আগে ব্রিটিশ প্রশাসন বলেছিল, তিনি ক্ষমা চাইলে তাকে মক্কায় নির্বাসন দেয়া যেতে পারে। এ প্রস্তাবের জবাবে তিনি বলেন, মক্কা তার প্রিয় জায়গাগুলোরর একটা। কিন্তু তার জন্য যদি ব্রিটিশরাজের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়, তার থেকে তিনি জন্মভূমিতে মৃত্যুকেই বেছে নেবেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.