নতুন তথ্য দিলেন সৌদি যুবরাজ তুর্কি আল-ফয়সাল

সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল তালেবান সম্পর্কে নতুন তথ্য দিয়েছেন। ২২ সেপ্টেম্বর লন্ডনে রয়্যাল সোসাইটি অফ এশিয়ান অ্যাফেয়ার্সের এক বৈঠকে মাইকেল ফিল্ড সম্পাদিত ‘দ্য আফগানিস্তান ফাইল’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দেওয়া তার দেয়া বক্তব্যে নতুন তথ্যগুলো উঠে এসেছে। প্রিন্স ফয়সাল তার বক্তব্যে আফগানিস্তান, তালেবান, আল-কায়েদার সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক কেমন ছিল তা তুলে ধরেছেন।

সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল

তিনি বলেন, আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে যে কোনো ভূমিকা থেকে নিজেকে এবং সৌদি আরবকে সবসময় দূরে রেখেছিলেন। প্রতিবেদনটি বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ করে দ্য আরব উইকলি।

প্রিন্স ফয়সাল উল্লেখ করেন, তালেবানরা সৌদি শরিয়া আইনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করেনি। তারা বরং সুফি দেওবন্দি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তালেবানরা এমন একটি মতাদর্শের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা ওহাবি মতবাদের জনক মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাবের মত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

নাইন ইলেভেন হামলা সংক্রান্ত এফবিআইয়ের নথি প্রকাশের পর এই প্রথমবারের মতো সৌদির সাবেক গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্য পাওয়া গেল, যিনি সেপ্টেম্বরে পেন্টাগন হামলার ১০ দিন আগে পদত্যাগ করেছিলেন।

প্রিন্স ফয়সাল বলেন, সৌদি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি তালেবান এবং আল-কায়েদা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। দু’পক্ষই ওহাবি মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত এই ধারনা ভুল।

পর্যবেক্ষকরা আরব সাপ্তাহিককে বলছেন, প্রিন্স ফয়সাল আল-কায়েদা এবং অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠী থেকে সৌদিকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের হামলার ঘটনায় সৌদির ভূমিকা অস্বীকার করেন। যদিও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, এমনকি যারা হামলা করেছিল তাদের অধিকাংশই সৌদির নাগরিক ছিল। তালেবানের সঙ্গে কোনো পূর্ব সম্পর্কের অনুপস্থিতি সৌদি আরবকে নতুন তালেবানদের মোকাবেলা করতে সহজ করবে।

খবরে বলা হচ্ছে, দেওবন্দি একটি ভারতীয় ইসলামিক স্কুল যা কঠোর সালাফবাদী চিন্তাধারা এবং সুফিবাদের সংমিশ্রিত রূপ। আফগান ফাইল বইতে প্রিন্স ফয়সালের অতি সম্প্রতি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে তিনি বলেছেন, ওসামা বিন লাদেনকে ১৯৯৮ সালে তিনি ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন তালেবান নেতা মোল্লা ওমর প্রথমে তাতে সম্মতি দিলেও পরে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

তিনি আরও বলেন, মোল্লা ওমর বলেন জানিয়ে দেন সৌদি আরবের উচিত বিন লাদেনের সাথে কথা বলা। আর তালেবান মনে করে বিন লাদেনের সাথে যুদ্ধ না করে সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে লড়াই করা উচিত। প্রিন্স ফয়সাল তখন বলেছিলেন, আপনি যা বলছেন তাতে আমরা উভয়পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হব। পরে আমি সৌদি সরকারকে তালেবানদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরামর্শ দিই, যা সৌদি সরকার গ্রহণ করেছিল।

প্রিন্স ফয়সাল বলেন, তালেবান প্রতিনিধি দল সৌদি আরব পরিদর্শন করে এবং তৎকালীন ক্রাউন প্রিন্স (বাদশাহ আবদুল্লাহ) তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তালেবান আল-কায়েদার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে কি না (এটি বিন লাদেনের মৃত্যুর আগের ঘটনা)। তালেবান প্রতিনিধি দলের উত্তর ছিল ‘না’। তখন বলা হয়, লাদেনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করা পর্যন্ত সৌদির সঙ্গে তালেবানের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।

তবে নতুন করে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর প্রিন্স ফয়সাল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন, বর্তমান সংকটকালে আফগানিস্তাকে পরিত্যাগ করা ঠিক হবে না। তিনি নিজের দেশকেও তা সমর্থন করার আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে তালেবানকে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের আহ্বানও জানান এই সাবেক সৌদি গোয়েন্দা প্রধান।