আফগানিস্তানে 'দ্বিমুখী ভূমিকায়' পাকিস্তান!
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কাবুলের পতন ঘটিয়ে আফগানিস্তানকে ইসলামিক আমিরাতে রূপান্তর করার ফলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার কথা বললেও সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতাকারী হিসেবে পরিচিত দেশ পাকিস্তানের এই দ্বিমুখী ভূমিকার কারণে দক্ষিণ এশিয়াসহ সমগ্র অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি বেড়েছে। কানাডা-ভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমন তথ্য প্রকাশ করেছে বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে দ্য ইকোনমিক টাইমস।
তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কয়েকদিনের মাথায় কাবুল সফর করেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কানাডা-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি (আইএফএফআরএএস) বলছে, আফগান তালেবান এবং তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) মধ্যে 'দৃঢ় সম্পর্ক' বিবেচনায়, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী 'গণতন্ত্রপন্থী' দেশগুলোতে এমনকি পাকিস্তানেও সহিংসতা বাড়তে পারে। আফগানিস্তানের প্রভাবে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল, বিশেষ করে পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটেছে বলেও মনে করছে আইএফএফআরএএস।
সংস্থাটি বলছে, এর বড় উদাহরণ হলো— শুধু গত আগস্টেই ৩৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং এতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হয়েছেন। যা কিছুটা উদ্বেগজনকই বটে। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বর মাসে ওয়াজিরিস্তানে টিটিপিরি হামলায় ৭ পাকিস্তানি সৈন্য নিহতের পর আফগান সীমান্তবর্তী জেলায় পাক সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হত্যার ঘটনা ঘটে। যা পাকিস্তানসহ অত্র অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার সর্বশেষ উদাহরণ বলেই মনে হচ্ছে।
কানাডা-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, বিশেষজ্ঞরা পাকিস্তানের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করেছেন। যেখানে তারা দেশটির 'দ্বৈত খেলা' এবং 'সন্দেহজনক' অবস্থান লক্ষ্য করেছেন। অন্যদিকে, ক্ষমতা দখলের পর তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। তালেবানের এই ঘোষণা পাকিস্তানের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। যদিও তালেবান আশ্বাস দিলেও তা রাখার নজির কম।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আইএফএফআরএস জানিয়েছে, মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও ২০২০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ৬ হাজারেরও বেশি সন্ত্রাসী আস্তানা তৈরি করেছিল। আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাঙ্কের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে বিদেশি তথা পাকিস্তানি সন্ত্রাসী যোদ্ধাদের সংখ্যা অন্তত ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার৷ যা উভয় দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সন্ত্রাসীদের অধিকাংশই পাকিস্তান তালেবান বা টিটিপির সদস্য।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডব্লিউ -এর মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় চোরাচালান ও সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণের জন্য পাকিস্তানি সামরিক ও সুশীল সমাজ তালেবানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।
লন্ডন ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক আয়েশা সিদ্দিকার উদ্ধৃতি দিয়ে আইএফএফআরএএস নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, 'তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে ইসলামিক চরমপন্থা নতুনভাবে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। ফলে দেশটি ব্যর্থ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে তার ভাবমূর্তি অব্যাহতভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।'
ইকোনমিক টাইমস বলছে, আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে দেশটির জমিয়তে উলামা-ই-ইসলাম-ফজল নামের রাজনৈতিক দলটি। শুধু তাই নয়, তারা এই ইস্যুতে ইমরান খানের সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে বিপ্লবেরও ডাক দিয়েছিল। এই ধরনের আহ্বান দেশটির জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে রক্তবন্যা বইয়ে দিতে উৎসাহী করতে পারে৷
ইসলামাবাদ-ভিত্তিক পাকিস্তানি ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজের পরিচালক মুহাম্মদ আমির রানাকে উদ্ধৃত করে আইএফএফআরএস জানায়, তালেবান আফগানিস্তান দখলের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো উৎসাহিত হবে, কিন্তু এটি এখানেই শেষ নয়। দেশটিতে একটি নতুন যুদ্ধের সূচনা হতে পারে, যা রাষ্ট্র, সমাজ এবং ধর্মের ভূমিকা সম্পর্কে চলমান বিতর্ককে আরও উস্কে দিতে পারে।
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ আর ম্যাকমাস্টার পাকিস্তানকে 'শত্রু' আখ্যা দিয়ে বলেছেন, দেশটি তাদের পররাষ্ট্রনীতির একটি বাহু হিসেবে 'জিহাদি সন্ত্রাসীদের' ব্যবহার করে। তাই আমাদের এটা ভাবা বন্ধ করতে হবে যে, পাকিস্তান আমাদের সহযোগী। কারণ, তারা বন্ধুর বেশে জঙ্গিগোষ্ঠীকে সংগঠিত, প্রশিক্ষণ ও সজ্জিত করে এবং সেগুলোকে তাদের পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে ব্যবহার করে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.