বেঁচে আছি মৃতের মতো, বলছেন আফগান শিক্ষার্থী

আফগানিস্তানে তালেবানের আকস্মিক ক্ষমতায় আসা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, নারী অধিকার কর্মী ও দেশ ত্যাগকারী চার নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে তারা কেমন জীবন যাপন করছেন, তা তুলে ধরেছেন। তাদের একজনের নাম আহমেদ। তিনি বলছেন, জীবন এখন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

অস্ত্র হাতে তালেবান যোদ্ধাদের সতর্ক অবস্থান

চাকরিজীবী আহমেদ বলছেন, তালেবান ক্ষমতা দখলের আগে আমি একটি আফগান প্রাইভেট কোম্পানিতে অফিস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতাম। সময়টা আমার জন্য খুব ভালো ছিল। কারণ আমার বোনেরা স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে। আমার ভালো বেতনে পরিবার চালিয়ে নেওয়া যথেষ্ট ছিল। কিছু অর্থ সঞ্চয়ও হচ্ছিল।

আহমেদ বলছেন, কর্মক্ষেত্রে আমার অনেক বন্ধু ছিল, তারা সবাই এখন বেকার। এখানে এখন কোনো কাজ নেই। পরিবারের জন্য আয়-রোজগারের কোনো উপায় নেই। আমি পরিবারের একমাত্র ছেলে এবং বড় সন্তান। ৬০ বছর বয়সী বাবার হাঁটুতে সমস্যা থাকায় কাজ করতে পারেন না। আমার কাজ না থাকায় আমি অপরাধবোধে ভুগি। ওদিকে খাদ্যের দামও প্রতিদিন বাড়ছে।

শিক্ষার্থী জাহরা বলছেন, আমি মেডিকেলে পড়তাম। কিন্তু তালেবান আসার পর ক্লাসে যেতে সক্ষম হইনি। ভর্তি পরীক্ষায় আমার স্বপ্নের স্কোর পাওয়ার জন্য আমি দুই বছর চেষ্টা করেছি। এই প্রচেষ্টার দাম অনেক। কিন্তু তা এখন আমাকে ব্যথিত করে। কারণ প্রচেষ্টার কোনো ফল পেতে পারিনি।

জাহরা বলছেন, জীবন এখন বেঁচে নেই। এই বেঁচে থাকা কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই। যখন আমি স্কুলে ছিলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম তখন জীবনটা অন্যরকম ছিল। বন্ধুদের সাথে অধ্যয়নের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলাম। আমি সত্যিই ছাত্রজীবন মিস করি। বেশিরভাগ সময় এখন বাড়িতেই কাটে। ইংরেজি শিখছি ও বাড়িতে বসে বই পড়ছি। হয়তো একদিন আমরা লেখাপড়ায় ফিরতে পারব।

নারী কর্মী সানা। তিনি আফগানিস্তানে নারী অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, তালেবান ক্ষমতায় আসার আগেও অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলাম কিন্তু আমরা খুশি ছিলাম। কারণ আমাদের কিছুটা স্বাধীনতা ছিল। আমরা পড়াশোনা, কাজ ও বন্ধুদের সাথে বাইরে যেতে পারতাম। একসাথে বসতে, তর্ক করতে ও হাসতে পারতাম।

সানা বলছেন, হঠাৎ সবকিছু বদলে গেল এবং আমরা জন্মভূমি থেকে দূরে চলে গেলাম। আমি বর্তমানে ইরানে বসবাস করছি। আমার জার্মানির ভিসা আছে, এখনও তা বৈধ। এটি একটি খারাপ স্বপ্নের মতো। আশা করি, জেগে উঠব এবং শিগগির বাড়ি ফিরব। আমার মাতৃভূমি থেকে দূরে থাকা আমার পক্ষে কঠিন। আমি হিজরত করেছি কিন্তু আমার আত্মা আফগানিস্তানে রয়ে গেছে।

সাংবাদিক সাঈদ বলছেন, আামি এখন যুক্তরাষ্ট্রে। একজন সাংবাদিক হিসাবে পেশাগত জীবন মিস করি। দেশে ফিরে ক্যারিয়ারে ভালো করার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু এখন আমি বিধ্বস্ত বোধ করি। যেদিন তালেবানরা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়, সেদিনও আমি কাজ করেছি। কিন্তু বিকেলের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে যায়।

সাঈদ বলছেন, ২০ বছরের অগ্রগতি এবং ত্যাগ সবকিছুই ভেস্তে গেছে। আমার আশা এবং স্বপ্ন- সবকিছুই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকা সত্যিই অনেক কঠিন।