ইসরায়েলি প্রাচীরে আটকা গাজাবাসী

ফিলিস্তিনের গাজায় বসবাসকারী প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষ এখন জেলখানার মধ্যে বাস করছে বলা যায়। কারণ সাড়ে ৩ বছর ধরে গাজা সীমান্তে সুরক্ষা প্রাচীর তৈরি করেছে দখলদার ইসরায়েল। গত ৬ ডিসেম্বর তা উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ফলে আরও বেশি করে আটকা পড়ল গাজাবাসী। 

গাজা সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ করছে ইসরায়েল

২০০৬ সালে হামাস আইনসভা নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে ইসরায়েল উপকূলীয় ছিটমহলে আরোপিত অবরোধ আরও কঠোর করছে। হামাস ‘জোর করে’ গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ২০০৭ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ আন্দোলনের সদস্যদের বহিষ্কার করে। এরপর অবরোধ আরও তীব্র হয়।

গাজা থেকে হামাস যে টানেল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল ইসরায়েল এই হুমকির প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রাচীরের ধারণা নিয়ে এসেছিল। হামাস ২০১৪ সালের গাজার যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের দিকে রকেট চালানোর জন্য এবং ইসরায়েলি সৈন্যদের অপহরণ কাজে টানেলগুলি ব্যবহার করেছিল।

গ্যালভানাইজড স্টিলের প্রাচীরের ওজন প্রায় ২০ হাজার টন ও উচ্চতা প্রায় ৬ মিটার। এটি উত্তরে জিকিম সৈকতের কাছে নতুন সামুদ্রিক বাধা থেকে দক্ষিণে কেরেম শালোম ক্রসিং পর্যন্ত সীমান্ত বরাবর ৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রাচীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ বলেন, এই বাধা হামাসকে রুখে দেবে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, প্রাচীরটি ইসরায়েল-মিশরীয় সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত প্রাচীরের মতো। মাটির তলেও সমান প্রসারিত। এই প্রাচীর নির্মাণে ব্যয়ের পরিমাণ ৩.৫ বিলিয়ন ইসরায়েলি শেকেল।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এরান ওফির ইসরায়েলের সীমান্ত প্রাচীরের দায়িত্বে থাকা কমান্ডার। তিনি বলছেন, পৃথিবীতে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ভূগর্ভস্থ বাধা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা করেছি।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, সারা বিশ্ব থেকে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি লোক প্রাচীর নির্মাণে কাজ করেছে। ৩ লাখ ৩০ হাজার ট্রাকের সমপরিমাণ ৩ মিলিয়ন ঘনমিটার কংক্রিট ঢালা হয়েছে। এ পরিমাণ কংক্রিট দিয়ে ইসরায়েল থেকে বুলগেরিয়া পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব। নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টন লোহা এবং ইস্পাত। একই পরিমাণ ইস্পাত দিয়ে তৈরি হয়েছে ইসরায়েল থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত একটি প্রাচীর।

গাজার নুসেরাতে থাকেন সুহাদ আল-রাবাইয়া। তিনি গাজার আল-আকসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। আল মনিটরকে তিনি বলেন, গাজা সীমান্তে ইসরায়েল যে প্রাচীর তৈরি করেছে তা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বাকি অংশ থেকে গাজা স্ট্রিপকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এটি গাজার নাগরিকদের দম বন্ধ অবস্থা সৃষ্টি করবে। এতে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল দখলকৃত অঞ্চলে গাজাবাসী আর প্রবেশ করতে পারবে না।