যেভাবে বেড়ে ওঠে ‘জায়ান্ট অব আফ্রিকা’র শিশুরা

যে কোনো পরিস্থিতিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন নাইজেরিয়ার জাতিগত মূলনীতি। তাদের অনানুষ্ঠানিক নীতিবাক্য ‘নাইজা নো দে ক্যারি লাস্ট’ বা নাইজেরিয়া কখনোই হারতে জানে না। তাদের এই বিজয়ী মানসিকতাই ছিনিয়ে আনছে আফ্রিকার ‘শ্রেষ্ঠত্বের আসন’। নাইজেরিয়া হলো আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ।

উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে লক্ষ্য করে বড় হতে থাকে নাইজেরিয়ার শিশুরা

ব্লুমবার্গের মতে, এখন মহাদেশটির সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ নাইজেরিয়া। এজন্য তাদের বলা হয়েছে ‘দ্য জায়ান্ট অব আফ্রিকা’। নাইজেরিয়ার সাফল্যের উজ্জ্বল উদাহরণগুলো সাহিত্য জগতে, আন্তর্জাতিক সঙ্গীত, এমনকি খেলাধুলায়ও।

‘তোমাদের অবশ্যই তোমাদের বাবা-মায়ের চেয়ে বড় হতে হবে- পেশা শিক্ষক, প্রকৌশলী, কৃষক কিংবা শিল্পী যাই হোক না কেন’ এই পারিবারিক রীতি ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে লক্ষ্য করে বড় হতে থাকে নাইজেরিয়ার শিশুরা। পরিবার থেকে সমাজ, সর্বোপরি রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রায় একই অলিখিত মূলনীতি নিয়ে শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য এমনকি ক্রীড়া ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে নাইজেরিয়া।

লগোসে জন্ম নেওয়া সুপারস্টার উইজকিড ওয়ান ডান্স গানটি দিয়ে বিলবোর্ড হট ১০০ চার্টের শীর্ষে ছিলেন। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জেতা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান নাট্যকার চিমামান্ডা এনগোজি আদিচির বাড়ি নাইজেরিয়া, যার উপন্যাস ‘হাফ অব এ ইয়েলো সান’ গত ২৫ বছরে কথাসাহিত্যের জন্য সেরা বই হিসাবে মহিলা বিভাগে পুরস্কার জিতেছে।

ইংরেজি নাইজেরিয়ার সরকারি ভাষা হলেও দেশটিতে ৩৭০টিরও বেশি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, যারা কমপক্ষে ৫০০টি ভাষায় কথা বলে। শৈশবকাল থেকেই নাইজেরিয়ান শিশুদের ওপর উচ্চ প্রত্যাশা চাপিয়ে দেওয়া হয়। ‘তোমাদের একাধিক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে, যথেষ্ট উপার্জন করতে হবে, ভালো বিয়ে করতে হবে এবং বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের যত্ন নিতে হবে’ ইত্যাদি।

নাইজেরিয়া একটি সমষ্টিবাদী সমাজ হিসাবে বিবেচিত। একজন সদস্যের সাফল্যে বাহবা দেয় পুরো সমাজ। তাদের জাতীয় সংগীতের মধ্যে রয়েছে মহান উচ্চতা অর্জন এবং অতীতের বীরদের শ্রম কখনোই বৃথা যেতে না দেওয়ার অঙ্গীকার।

সামাজিক গতিশীলতা এবং ধনী হওয়ার মানসিকতা তৈরির দায়িত্ব নিয়ে সিনেমা তৈরি করছে নলিউড। নাইজেরিয়ার চলচ্চিত্র শিল্প ২০০৯ সালে হলিউডকে ছাড়িয়ে গেছে এবং এখন বলিউডের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প হিসাবে বিবেচিত। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তারা। নলিউডের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমা হল ‘দ্য ওয়েডিং পার্টি’।

বয়সীদের বাধ্যতামূলকভাবে ‘আঙ্কেল’, ‘আন্টি’, ‘স্যার’, ‘ম্যাডাম’ বলতে হবে। সম্মানিত হওয়াকে অনেক মূল্য দেয় নাইজেরিয়ার মানুষ। তাই তারা দৃঢ়, কঠোর পরিশ্রমী এবং প্রতিযোগিতামূলক।

তারা সামাজিকভাবেও সভ্যতাকে সমর্থন করে। কোনো অবস্থাতেই কোনো প্রবীণকে শুধু তাদের নাম দিয়ে ডাকা যাবে না। ভুল করলে তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হবে, ‘আপনি এই লোকটির সমবয়সী নন।’