মার্কিন পাসপোর্টধারী ফিলিস্তিনির মৃত্যু, সরব ইসরায়েল

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সৈন্যদের দ্বারা গ্রেপ্তার ও হামলার সময় একজন বয়স্ক ফিলিস্তিনি ব্যক্তির মৃত্যুর প্রেক্ষিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা সে সময় দায়িত্বে থাকা তিন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ওমর আবদুল মাজিদ আসাদের লাশের পাশে স্বজনেরা

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গত মাসে ৭৮ বছর বয়সী মার্কিন পাসপোর্টধারী ওমর আবদুল মাজিদ আসাদের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, শুধু মার্কিন পাসপোর্টধারীদের নয় বরং ইসরায়েলি সেনাদের হাতে সংঘটিত সমস্ত ফিলিস্তিনি মৃত্যুর তদন্ত করতে হবে।

কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা আসাদের মৃত্যুতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং উইসকনসিনের কংগ্রেস সদস্যদের কাছ থেকে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে ভুল স্বীকার করে একটি বিরল বিবৃতি জারি করে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১২ জানুয়ারি রামাল্লার উপকণ্ঠে জিলজিলিয়া গ্রামে গভীর রাতের অভিযানের সময় আসাদের মৃত্যু নৈতিক ব্যর্থতা ও দুর্বল সিদ্ধান্ত গ্রহণেরই ফল।

ইসরায়েলিদের একটি চেকপোস্ট

বিবৃতিতে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, গ্রেপ্তারের সময় আসাদ বিশেষ কোনো পরিচয় প্রকাশ করেননি এবং যখন তাকে সেনারা বাধা দেয় তখন তিনি তাদের সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেন। এরপর ইসরায়েলি সৈন্যরা হাত বেঁধে অন্য তিন বন্দীসহ তাকে কাছের একটি ভবনে নিয়ে যায়। পরে সেনারা সেখান থেকে বন্দীদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু আসাদ সেখানেই পড়ে থাকলে ইসরায়েলি সেনারা তিনি ঘুমিয়ে আছেন মনে করে সেখানে ফেলে যায়। পরে দেখা যায় তিনি মারা গেছেন।

ময়না তদন্তে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সৈন্যদের দ্বারা আটক থাকাকালীন হার্ট অ্যাটাকে তিনি মারা যান। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি একটি গুরুতর ও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।

সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আভিভ কোচাভি বলেছেন, ওমর আবদুল মাজিদ আসাদের অবস্থা পরীক্ষা না করে তাকে ওইভাবে ফেলে আসা ছিল একটি অসতর্ক কাজ, যা ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মূল্যবোধের পরিপন্থী।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন গতকাল মঙ্গলবার জানায়, আসাদের মৃত্যুতে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং সম্পূর্ণ জবাবদিহিতা আশা করে।

তদন্তের ফলস্বরূপ, ব্যাটালিয়ন কমান্ডারকে ভর্ৎসনা করা হবে একং প্লাটুন ও কোম্পানি কমান্ডারদের তাদের কমান্ড কেড়ে নেওয়া হবে। এর ফলে তাদেরকে আগামী দুই বছর তারা কোনো কমান্ডিং ভূমিকা পালন করতে দেয়া হবে না।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ইব্রাহিম মেলহেম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তারা এ তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে ইসরায়েলি কর্মকাÐের জন্য তারা আরো বৃহত্তর দায়বদ্ধতা দেখতে চান। তার দাবি, ইসরায়েল এই তদন্ত করেছে কারণ আসাদের মার্কিন পাসপোর্ট রয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত আসাদের মতো আরও অনেক শহীদ আছে কিন্তু যেহেতু তারা শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি পরিচয় ধারণ করে, কেউ তাদের চিন্তা করে না।