পুলিশ ও বিচারকদের হত্যা করতে বাহরাইন থেকে ঢাকায় রাজ্জাক!

মনির আব্দুল রাজ্জাক। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে বাহরাইন চলে যান। সেখানে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে লেবার হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন ‘গাজওয়াতুল হিন্দে’ যোগদান করে বাংলাদেশের বিচারক ও পুলিশ বাহিনীকে টার্গেট করে ফেসবুকে পোস্ট দেন।

এক পর্যায়ে বিচারক ও পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে বাহরাইন থেকে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন মনির আব্দুল রাজ্জাক। ধর্মীয় উগ্র জিহাদী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ছদ্মবেশে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি।

গতকাল ৫ মার্চ রাজধনীর মতিঝিল থানার ফকিরাপুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ, সিটিটিসি। বিভাগটির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন, দেশি-বিদেশি ২টি সিম কার্ড ও একটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।

মো. আসাদুজ্জামান জানান, এক শ্রেণির অপরাধী চক্র প্রবাসে অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্র মতবাদ সংবলিত পোস্ট ও ভিডিও দেখে রেডিক্যালাইজড হয়ে যায়। এরপর ফেসবুকে নিজের পরিচয় গোপন করে আইডি খুলে ধর্মীয় উগ্র মতবাদপুষ্ট প্রচারণা চালায়। মনির আব্দুল রাজ্জাক তেমনই একজন। 

সিটিটিসি জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মনির আব্দুল রাজ্জাক বাহরাইন থেকে ২০১৮ সালে দেশে আসে এবং ২ মাস পর পুনরায় প্রবাসে গমন করে। সেখানে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদপুষ্ট ও উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে অনলাইনে জঙ্গীবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিল।

মনির আব্দুল রাজ্জাক বাহরাইনে তার সহকর্মী পাকিস্তানি নাগরিকের পরামর্শে ফেসবুকে একটি ফেক আইডি খোলে। সেই আইডিতে সে নিজেকে পাকিস্তান উর্দু স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশুনা করেছে মর্মে স্ট্যাটাস দেয়, যাতে অন্যরা তাকে পাকিস্তানি মনে করে। এারপর সেই আইডিতে সে একের পর এক রাষ্ট্রবিরোধী ও ষড়যন্ত্রমূলক পোস্ট দেয়।

যা ছিল সেই ফেসবুক পোস্টে

একটি পোস্টে মনির আব্দুল রাজ্জাক লিখেছে, ‘গাজওয়াতুল হিন্দ ডাকছে আমায়। জিহাদের ডাকে নিজেকে কোরবানি করলে তার সকল হিসাব সহজ হয়ে যায়। সকলের দোয়া কামনা করছি, গাজওয়াতুল হিন্দের এই যুদ্ধে আল্লাহ যেন আমায় কবুল করেন। আপনারাও দলে দলে গাজওয়াতুল হিন্দের পতাকাতলে আসুন। এই যুদ্ধে আমাদের জয় হবেই হবে।’ 

আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, ‘দেশকে কে না ভালোবাসে? দেশের ভালো কে না চায়? এই ভালোবাসার খাতিরে চলমান জুলুম থেকে দেশকে আবার স্বাধীন করতে হবে। আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধ শুরু হোক সুষ্ঠু বিচার পরিচালনার জন্য। কয়েকটা বিচারক আর পুলিশ নিধন করলেই সোনার বাংলা ফিরে পাবো।’

সরাসরি হামলার কথা বলে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেশকে মুক্ত করতে হলে জানোয়ার পুলিশ ও শুকরের বাচ্চা বিচারকদের ওপর হামলা কর। দেশ স্বাধীন কর। পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করুন। তাদের পরিবারের ওপর হামলা করুন। ১০/১২টা মরলেই কেল্লা ফতেহ।’

এমন নানা ধরনের উস্কানিমূলক ও উগ্রবাদী পোস্ট করছিলেন মনির আব্দুল রাজ্জাক। তার বিরুদ্ধে ডিএমপির রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটিটিসি।