শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে এখন হাত পাতছে মলদোভা

ইউরোপের ছোট্ট এবং দরিদ্র রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত মলদোভায় বানের জলের মতো ঢুকছে শরণার্থী। এ যেন অভাবের সংসারে ‘নতুন কুটুম’। ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ মলদোভার হাল এখন এমনই। ১১ দিনে এ সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার ছুঁয়েছে। নিজেদের ভরণ-পোষণেই হাফিয়ে ওঠা মাথাপিছু বার্ষিক ৫ হাজার ২৪০ মার্কিন ডলার আয়ের দেশটি রীতিমতো অন্ধকার দেখা শুরু করেছে। সংকট কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘হাত পাতছেন’ দেশটির ২ কোটি ৬০ লাখ জনগণের প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী নাটালিয়া গ্যাভরিলিটা। এএফপি।

মলদোভা সীমান্তে ইউক্রেনিয়ান শরণার্থীদের ভিড়

রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইউরোপ সফরের অংশ হিসেবে রোববার পোল্যান্ড থেকে মলদোভায় পৌঁছান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এদিনই রাজধানী চিসিনিয়াউর এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় আরও মার্কিন সহায়তা দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নাটালিয়া। ব্লিঙ্কেনকে তিনি বলেন, ‘মলদোভার মতো একটি ছোট্ট দেশের জন্য আনুপাতিকভাবে শরণার্থীদের সংখ্যা অনেক বড়।

যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা এ শরণার্থীদের আশ্রয়, আতিথেয়তা এবং খাদ্য সহায়তার জন্য আমাদের আরও সহায়তা প্রয়োজন। অবশ্যই সেটা খুব দ্রুত।’ মলদোভার প্রধানমন্ত্রী নাটালিয়াকে আশ্বস্ত করে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমরা দুর্দশাগ্রস্ত লোকদের জন্য উদারতা, আতিথেয়তা দিতে ইচ্ছুক- এমন ভালো বন্ধুর জন্য প্রশংসা করি।

প্রকৃতপক্ষে এ চাপের বোঝা মোকাবেলায় আপনাকে সাহায্য করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে চাই। আগের দিন শনিবার পোল্যান্ডে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার জন্য কংগ্রেসে ২.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল চেয়েছে হোয়াইট হাউস।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে প্রথম রুশ রকেট আঘাত হানতে শুরু করার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ১.৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ প্রতিবেশী ইউরোপীয় দেশগুলোর সীমানা ধরে ভয়ানক এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পালিয়ে যায়। যা এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট।

সপ্তাহজুড়ে বিশ্ব দেখেছে, পরিবারগুলো বিশৃঙ্খল ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে চড়ার জন্য লড়াই করছে, বাবারা গাড়ির জানালা দিয়ে তাদের সন্তানদের বিদায় চুম্বন করছে এবং যারা নিরাপদে পৌঁছেছে তাদের চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।

বেশিরভাগ ইউক্রেনীয় তাদের দেশ ছেড়ে পশ্চিমে পোল্যান্ড, মলদোভা, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া এবং হাঙ্গেরির দিকে যাচ্ছে। দেশগুলো পালিয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর জন্য সীমানা উন্মুক্ত করেছে। যদিও সময়ের সাথে সাথে কিছু লোকের বিরুদ্ধে পুশব্যাক এবং জাতিগত বৈষম্য সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর সতর্ক করেছে, ইউক্রেনীয়দের গ্রাস করা মানবিক সংকট সবে শুরু হয়েছে। তাদের অনুমান, ৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হতে চলেছে। যুদ্ধের কারণে আরও লক্ষাধিক লোক ইউক্রেনের মধ্যেই বাস্তুচ্যুত হবে।