পুঁজিবাজারে আজ থেকে নতুন নিয়ম

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি জানিয়েছে, একদিনে তালিকাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম সর্বোচ্চ ২ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। আজ বুধবার, ৯ মার্চ থেকে এ নিয়ম কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে।

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি

বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদিন আহমেদ মঙ্গলবার, ৮ মার্চ বিএসইসি কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধের কারণে গত কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামে। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএসইসি ওই বছরের ১৯ মার্চ প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের মাঝামাঝি দেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

একই সঙ্গে ৬টি ক্যাটাগরিতে সার্কিট ব্রেকার তথা শেয়ারের দাম কমা বা বাড়ার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ২০০ টাকার নিচে, তার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণ করা হয় ১০ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা ইউনিটের দাম ২০০ টাকার নিচে হলে একদিনে শেয়ার বা ইউনিটের দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে অথবা কমতে পারবে।

একইভাবে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে শেয়ার বা ইউনিটের দাম থাকা প্রতিষ্ঠানের সার্কিট ব্রেকার ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং সার্কিট ব্রেকার ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার ক্ষেত্রে। এ ছাড়া ১০০০ থেকে ২০০০ টাকার ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২০০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ এবং শেয়ার বা ইউনিটের দাম ৫০০০ টাকার ওপরে হলে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণ করা হয়। দেশের শেয়ারবাজারে মঙ্গলবার, ৮ মার্চ পর্যন্ত এই নিয়মেই লেনদেন চলছিল।

কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএসইসি নতুন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে বুধবার তথা আজ থেকে শেয়ার বা ইউনিটের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারে আগের নিয়মই কার্যকর হবে। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম একদিনে সর্বোচ্চ ২ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।

দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যেই গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। যার ব্যাপক প্রভাব পড়ে দেশের শেয়ারবাজারে, দেখা দেয় টানা দরপতন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, গত সোমবার পর্যন্ত শেষ ৮ কার্যদিবসের মধ্যে ৭ কার্যদিবসেই দরপতন দেখা যায় শেয়ারবাজারে। এতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪৯২ পয়েন্ট কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতেই সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন নিয়ে আসলো পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

এ বিষয়ে এদিন বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাদের মৌলিক ও প্রধান কাজ হলো বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়া। এর জন্য নানা রকম চেষ্টা করে থাকি আমরা। এরই অংশ হিসেবে বিএসইসি দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার একটি হলো দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া। অপরটি হলো স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া। তবে আগের মতো এটি দীর্ঘমেয়াদি হবে না। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই ২ শতাংশের এই সীমা প্রত্যাহার করা হবে।

পুঁজিবাজারের এই বিশেষজ্ঞা বলেন, আমরা আরো নির্দেশনা দিয়েছি যাতে সেকেন্ডারি মার্কেটে তারল্যপ্রবাহ নিশ্চিতকল্পে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড বা সিএমএসএফ থেকে আরো ১০০ কোটি টাকা দ্রুত ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়। যেটার বাস্তবায়ন মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়েছে।