বালির তেলেসমাতিতে কোটিপতি আলমগীর, বিয়ের কাবিন ১০ কোটি!

আলমগীর হোসাইন। ট্রাভেল এজেন্সি খুলে প্রতরণা, চেক ডিজঅনার, ভুয়া চাকরি, ভুয়া প্রজেক্ট দেখিয়ে প্রতরণারসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে ডজন খানেক মামলার আসামী। এসব প্রতারণা করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

সহযোগীসহ সিআইডির হাতে পাকড়াও আলমগীর, ফাইল ছবি

শুধু তাই নয়, ইস্টার্ন ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে ১০ কোটি  টাকা কাবিনে বিয়েও করেছেন আলমগীর। মুলত ব্যাংকের লেনদেনের সূত্র ধরে সালমা সুলতানা সুইটি নামের ওই নারী কর্মকর্তার সাথে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তার মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেই ব্যাংক কর্মকর্তা গ্যারেন্টার হয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকার এলসি এবং ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্যাশ করে দেবে বলে আলমগীরকে আশ্বস্ত করে।

আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আলমগীর তার প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে ব্যাংকার সালমা সুলতানা সুইটিকে তার দাবী মোতাবেক ১০ কোটি টাকার কাবিন দিয়ে বিয়ে করে। এরপর মাসিক ২ লাখ টাকা ভাড়ায় গুলশানের একটি বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে থাকা শুরু করে।

প্রতারণার কোটি কোটি টাকা থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর চাহিদা মোতাবেক কোটি টাকার গহনা ও নগদ টাকাসহ প্রায় চার কোটি টাকা তাকে প্রদান করে আলমগীর। পরবর্তীতে এলসি না হওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয় এবং একপর্যায়ে গত বছরের নভেম্বরে আলমগীরকে ডিভোর্স  দিয়ে ১০ কোটি টাকা দেনমোহরের বাকী টাকা আদায়ের জন্য  আদালতে মামলা দায়ের করেন সেই নারী ব্যাংক কর্মকর্তা।

বালির তেলেসমাতিতে কোটিপতি

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের নামে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন এই আলমগীর। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে আল তাকদির ইন্টারন্যাশনাল নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুলে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছে বলে প্রচার করে সে। এরপর বিভিন্ন সাপ্লায়ারদের সাব কন্ট্রাক্টের কাজ দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।

আলমগীর সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের ৩০০ কোটি সিএফটি বালি সাপ্লাইয়ের জন্য গত বছরের মার্চ মাসে ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে বলে প্রচারণা চালায়। তার নিজস্ব অনলাইন টিভি চ্যানেল তাকদির চ্যানেলে ব্যাপকভাবে এর প্রচারণা চালায়। দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৩০০ আগ্রহী সাপ্লায়ার সংগ্রহ করে।

এক সিএফটি বালিতে ১০ টাকা লাভ হবে বলে কাউকে ২ কোটি সিএফটি, কাউকে ৫ কোটি, কাউকে ১০ কোটি এবং কাউকে ২০ কোটি সিএফটি বালি ভরাটের কাজ দেবেন বলে চুক্তি করেন। এরপর কমিশন হিসেবে সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ৭ লাখ টাকা করে প্রায় ৩৫-৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে নেয় আলমগীর।

নিজেকে অতি বড় মাপের কন্ট্রাক্টর প্রমাণের জন্য গুলশান-১ এ অফিস নিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে অফিসের ডেকোরেশন করেন। গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে ১১০ আইটেমের খাবার পরিবেশন করে সাপ্লায়ারদের আপ্যায়ন করান। বড় সাপ্লায়ারদের নিয়ে বিভিন্ন রিসোর্টে পার্টির আয়োজন করেন। প্রজেক্ট এলাকায় সাপ্লায়ারদের নিয়ে ‘প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজের বালি সরবরাহের নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্টের শুভ উদ্ভোধন’ লেখা ব্যানারে টাঙিয়ে ধুমধাম করে কাজ উদ্ভোধন করেন।

প্রতারক আলমগীর তার অনেক ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেখানে তার সাথে অনেক নামীদামি ব্যক্তির হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিত দেখা যায়। তার এ ধরনের কার্যকলাপ দেখে সাপ্লায়াররা কাজ পাবার আশায় লাখ টাকা কমিশন দিয়ে কাজের চুক্তিপত্র করেন।

এভাবে জালিয়াতি ও প্রতারণা করে বড় অংকের টাকা সংগ্রহ করে আত্বগোপনে চলে যান আলমগীর ও তার সহযোগীরা। পরে সাপ্লায়াররা বালি ফেলার জন্য আলমগীরের সাথে যোগযোগ করে ব্যর্থ হন।

যেভাবে সিআইডির জালে ধরা আলমগীর

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজাদ বলেন, ভুক্তভোগী বেশ কিছু সাপ্লায়ার বিষয়টি সিআইডিকে জানায়। এরপর অনুসন্ধানে নেমে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর সুকৌশলে অভিযান চালিয়ে গতকাল রাতে আল তাকদির ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান আলমগীরসহ প্রজেক্ট ডিরেক্টর শফিকুল ইসলাম এবং পরিচালক ইমরান হোসাইনকে ঢাকার খিলগাঁও ও গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।