ইউক্রেনে চাকরি: প্রতিদিনের বেতন ২০০০ ডলার, আছে বোনাসও!

ইউক্রেন যুদ্ধে ভাড়াটে যোদ্ধা ও নিরাপত্তাকর্মীর চাহিদা এখন তুঙ্গে। ইউরোপ ও আমেরিকার প্রাইভেট মিলিটারি কন্ট্রাক্টর বা ব্যক্তি মালাকানাধীন সামরিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো এটাকেই ব্যবসার সুবর্ণ সুযোগ হিসাবে দেখছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ইউক্রেনে তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। মূলত ভাড়াটে যোদ্ধা সংগ্রহ ও নিয়োগের কাজ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যোদ্ধা সংগ্রহের জন্য অনলাইনে লোভনীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে।

২০০৫ সালে আফগানিস্তানে ভাড়াটে সেনা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র, ছবি-বিবিসি

প্রাইভেট মিলিটারি কন্ট্রাক্টর বা কোম্পানি মূলত ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানি, যারা অর্থের বিনিময়ে সামরিক বা নিরাপত্তা সেবা দিয়ে থাকে। বিবিসির এক প্রতিবেদন মতে, ভাড়াটে যোদ্ধা ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান ‘সাইলেন্ট প্রোফেশনালস’। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরই একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘নিয়োগ চলছে! বহুভাষী সাবেক সেনারা যারা ইউক্রেনে যেতে আগ্রহী তাদের অগ্রাধিকার। বেতন প্রতিদিন ২ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা)। এর সঙ্গে থাকছে আরও বোনাস। ইউক্রেনে পাঠানোর যাবতীয় তথ্য গোপন রাখা হবে। যে কাজ করতে হবে তা হলো ভয়াবহ সংঘাতের মধ্যে পরিবারগুলোর উদ্ধারে সহযোগিতা করা।’

ইউক্রেনে চাকরির সেই বিজ্ঞাপন, বিবিসি থেকে নেয়া

এসব নিয়োগ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেনে ভাড়াটে যোদ্ধা ও নিরাপত্তাকর্মীর চাহিতা বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশ কিছু ঠিকাদার এটাকে বড় সুযোগ হিসেবে লুফে নিয়েছেন। এসব ভাড়াটে যোদ্ধা ও নিরাপত্তাকর্মী যারা নিয়োগ দেয়, তাদের কদরও বেড়েছে। যেমনটা বলছিলেন কানাডীয়-আমেরিকান লেখক এবং প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি বিশেষজ্ঞ রবার্ট ইয়ং পেল্টন। তিনি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে ইউক্রেনে ব্যক্তি মালিকানাধীন ঠিকাদারদের বাজার এখন বেশ চড়া।’

এসব প্রতিষ্ঠান একদিকে যেমন লোভনীয় মূল্যে যোদ্ধা সংগ্রহ করছে, ঠিক একইভাবে আরও চড়া দামে তাদের নিয়োগ দিচ্ছে। তবে নিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক কার জন্য যে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে ও লোক সংগ্রহ করছে- সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না। রবার্ট পেল্টন বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে আটকে পড়া নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজে সাহায্য করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া করা হচ্ছে। এজন্য ৩০ হাজার থেকে ৬০ লাখ ডলার পর্যন্ত পরিশোধ করা হচ্ছে।

মূলত গত শতকের ষাটের দশকে পশ্চিমা দেশগুলোতে গড়ে ওঠে ব্যক্তি মালিকানার সামরিক ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান। এরপর গত কয়েক দশক ধরেই কাজ করে আসছে তারা। তবে চলতি শতকের শুরুর দিকে আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় এসব প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এ সময় পশ্চিমা দেশগুলো ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করতো।

ইরাক যুদ্ধ যখন তুঙ্গে তখন ব্ল্যাকওয়াটারের মতো হাজার হাজার ব্যক্তিগত ঠিকাদার সেখানে কাজ করছিল। তাদের কাজ ছিল সশস্ত্র মিশন যেমন- কনভয় সুরক্ষা থেকে শুরু করে সামরিক ঘাঁটিতে সৈন্যদের খাওয়ানো এবং আবাসনের ব্যবস্থা করা। ২০০৭ সালে বাগদাদে কোম্পানিটির ঠিকাদারদের গুলিতে ১৪ ইরাকি বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুসহ বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল ঘটনার পর ব্ল্যাকওয়াটার কুখ্যাত হয়ে ওঠে।