ঘটনাটি ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি রাত আনুমানিক দেড়টার দিকের। ৪৫ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি উত্তরা পূর্ব থানা এলাকার আজমপুরের শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাস্তা পারাপার হচ্ছিল। সে সময় দ্রুতগতির একটি গাড়ি তাকে সজোরে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়।

anjuman mufidulবেওয়ারিশ মরদেহ দাফনের প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম

গুরুতর আহত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে ছটফট করছিলেন ওই ব্যক্তি। স্থানীয় পুলিশ খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে যায়। ভোর ৪টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি অজ্ঞানামা হিসেবে মর্গে রাখা হয়।

এই ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু ঘটনার কয়েক দিন পার হওয়ার পরও মৃতদেহের কোনো পরিচয় খুঁজে পায়নি পুলিশ। সব থানায় মেসেজ পাঠিয়ে, খবর এবং ছবি প্রকাশ করে পরিচয় চাওয়া হয় মর্গে ১৫ দিন পড়ে থাকা মরদেহটির। এরপর বাধ্য হয়ে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করলে তারা মরদেহটি দাফন করে ফেলে।

শুধু ওই ব্যক্তিই নয়, একই বছরের অর্থাৎ ২০১৮-এর ১০ জানুয়ারি বেলা চারটার দিকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় একটি দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ২২ বছরের এক যুবক। হঠাৎ চলমান বাসের ধাক্কা লাগে তার শরীরে।

আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সেখানকার পুলিশ বক্সের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন এএসআই মো. রুবেল হোসেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ডিএমপির পল্টন মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি এবং পরদিন মামলা দায়ের করা হয়। এক্ষেত্রে অজ্ঞাতনামা হিসেবে মরদেহটি মর্গে রাখা হয়। পরিচয় না পাওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয় মৃতদেহটি।

ঢাকা মহানগর পুলিশ, ডিএমপির তথ্য অনুয়ায়ী, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ৬ জন, মে মাসে ৫ জন, জুন মাসে ২ জন, জুলাই মাসে ৯ জন, আগস্ট মাসে ২ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৮ জন, অক্টোবর মাসে ১৪ জন, নভেম্বর মাসে ৫ জন, ডিসেম্বর মাসে ৩ জন বেওয়ারিশ মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অজ্ঞাতনামা যে মরদেহগুলোর পরিচয় পেতে সমস্যা হয় তার বেশিরভাগই বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহত। এর মধ্যে কিছু মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার, আবার কিছু অপমৃত্যু। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার গবেষণা সেলের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে বিভিন্ন ঘটনায় ৬ হাজার ৬০২ জন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে ৩৫২ জন শিশু। ২৮ জন নারীকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। যৌতুকের কোন্দলে পরে নিহত হয়েছেন ৬০ নারী। পারিবারিক কলহের জেরে নিহত হয়েছেন ৪০৭ জন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে খুন হয়েছেন ৮৯৭ জন। ক্রসফায়ারের নামে নিহত হয়েছেন ১৪৯ জন। আত্মহত্যার ঘটনায় নিহত ৬৫৩ জন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার গবেষণার মধ্যে নিহত বেওয়ারিশ ব্যক্তিদের কোনো হিসাব নেই। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৯২টি। এতে আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৫ জন। নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৯৬৯ জন। কিন্তু দুর্ঘটনায় নিহত বেওয়ারিশ ব্যক্তিদের কোনো হিসাব বা তালিকা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত বেওয়ারিশ ব্যক্তিদের তালিকার বিষয়টি আগামীতে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, সিআইডিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি মাসে তারা বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধীর তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি বেওয়ারিশ মৃতদেহের কিছু তথ্য সংরক্ষণ করেন। সেই সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশের বিভিন্ন থানা থেকে আসা বেওয়ারিশ মৃতদেহের সংখ্যা ছিল ৩৭টি। অক্টোবর মাসে এই সংখ্যা ছিল ১৯।

দেশে বেওয়ারিশ মরদেহ দাফনের জন্য অন্যতম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। তারা বিনা খরচে থানা এবং হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে দাফনের কাজ সম্পাদন করে থাকে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রাজধানী বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া ৫১ বেওয়ারিশ মরদেহ দাফন করা হয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ছিল ৯৫টি এবং ডিসেম্বর মাসে ছিল ১০৭টি।  

এখন সহজেই পরিচয় মেলে বেওয়ারিশের

সম্প্রতি মরদেহের পরিচয় মিলছে প্রযুক্তির সাহায্যে। শনাক্ত করার এই কাজটি করে যাচ্ছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, পিবিআই। জানতে চাইলে পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইউসুফ আলী বলেন, অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধারের পর পরিচয় শনাক্তে ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম তথা এফআইভিইএস ব্যবহার করা হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত মরদেহ শনাক্তের জন্য আঙ্গুুলের ছাপ সংগ্রহ করে তা পাঠানো হয় পিবিআইয়ের ক্রাইম অ্যান্ড ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে। সেই ল্যাব থেকে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তথ্য পাঠানো হয়। পরে এনআইডি সার্ভারে রক্ষিত তথ্য থেকেই মেলে মরদেহের পরিচয়। পুরো প্রসেসটিতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট। তবে শুধু যাদের এনআইডি কার্ড থাকে তাদেরই পরিচয় মেলে এই পদ্ধতিতে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.