বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ব্যবসায় খুব সহজেই উদ্ধুদ্ধ হয় এবং টাকা বিনিয়োগ করতেও আগ্রহী হয়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুদবিহীন ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে দ্রত মানুষের মনে আস্থার জায়গা তৈরি করে একটি চক্র। এই ধর্মীয় ও শরিয়াভিত্তিক ব্যবসাকে প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ২০০ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে নরসিংদীর শাহ আলম ও তার চক্রের সদস্যরা।

rab arrested shah alam and othersগ্রেপ্তার শাহ আলম চক্র

বিনিয়োগে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারণার অন্যতম হোতা ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শাহ আলমসহ ৫ জনকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নরসিংদী জেলার প্রায় সকল থানার ৫-৬ হাজার সাধারণ পেশাজীবী মানুষ একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ব্যবসায়ে অতিরিক্ত লভ্যাংশ প্রাপ্তির আশায় শত শত কোটি টাকা অর্থ বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত হয়েছেন। বেশির ভাগ মানুষ তাদের সারাজীবনের কষ্টার্জিত জমানো অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। একদিকে করোনা মহামারিতে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, অপরদিকে বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটুকু হারিয়ে পথে বসেছে চক্রটির খপ্পরে পড়া নরসিংদীর সর্বস্তরের শত শত মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা তাদের গচ্ছিত টাকা ফিরে পাবার আশায় স্থানীয় সমবায় অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। এরপর জেলা সমবায় অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু প্রতারকরা লাপাত্তা হয়ে যায়।

২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় গুটিয়ে নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সবাই গা ঢাকা দিলে বিষয়টি নরসিংদী জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এই ঘটনার ভুক্তভোগীরা আইনি সহযোগিতার জন্য লিখিত অভিযোগ নরসিংদীতে অবস্থিত র‌্যাব-১১ এর কার্যলয়ে এসে জমা দেয়। এরপরই র‌্যাব ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর অভিযানে গত রাতে নরসিংদী জেলার সদর থানার ভেলানগর এলাকায় গোপন বৈঠক চলাকালে প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা মো. শাহ আলমসহ (৫০) ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার অপর ব্যক্তিরা হলেন- মো. দেলোয়ার হোসেন শিকদার (৫২), কাজী মানে উল্লাহ (৪৪), মো. সুমন মোল্লাহ (৩৩), এবং (৫) আ. হান্নান মোল্লাহ (৩০)।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, গত ২০১০ সালে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকায় একটি শরিয়াভিত্তিক শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানি তথা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে একটি প্রতারক চক্র। প্রতারক চক্রটি অতি সুকৌশলে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সুদমুক্ত ব্যবসায় প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের নিকট হতে আমানত সংগ্রহ করে।

ধর্মের দোহাই দিয়ে ধর্মপ্রাণ সাধারণ জনগণকে ভুল বুঝিয়ে তাদের সংস্থার সদস্য করা হতো। সুদমুক্ত জীবনযাপন ছিল তাদের প্রতিষ্ঠানের লোক দেখানো মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। চক্রের অন্যতম হোতা শাহ আলম নিজে কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে ৪টি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে এবং ২৪ জন জনবলের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ও অতিরিক্ত ২০ জন পরিচালক নিয়োগ দেয়।

আত্মীয় বা পরিচিতদেরকে তারা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিত। পরবর্তীতে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন থানার জনবহুল ও ব্যবসায়ীক এলাকায় জাঁকজমকপূর্ণ শাখা অফিস স্থাপন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- শাহ সুলতান এম.সি.এস. কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি., স্বদেশ টেক্সটাইল লি., শাহ সুলতান টেক্সটাইল লি. ও শাহ সুলতান প্রপার্টিজ লি.।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেপ্তারদের প্রায় ৩ শতাধিক কর্মী রয়েছে। যাদেরকে কোনো প্রকার বেতন প্রদান করা হয় না। তাদেরকে গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে এককালীন ১০ শতাংশ ও বছরান্তে ৬ শতাংশ অর্থ প্রাপ্তির প্রলোভন দেখানো হত। গ্রেপ্তারকৃতরা বিনিয়োগকারীদেরকে বার্ষিক ১২-১৬ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখাত।

এছাড়াও তারা গ্রাহকদের নিকট হতে উচ্চ মুনাফায় মাসিক-ভিত্তিতে ডিপিএস এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করত বলে জানায়।  তারা গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধিতে সক্ষম হন। তারা বেশকিছু গ্রাহককে উচ্চ মুনাফায় লোন প্রদান করে। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না হলেও তারা ব্যাংকের মতই গ্রাহকদের নিকট হতে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করত। গ্রাহকদের সংগৃহীত অর্থ ল্যান্ড প্রজেক্ট টেক্সটাইল ও নিজস্ব অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বলে জানায়। গ্রাহকদের তথ্যমতে সংগৃহীত টাকার পরিমাণ আরো বেশি  হতে পারে।

র‍্যাব জানায়, করোনার ক্রান্তিলগ্নে যখন মানুষের টাকার প্রয়োজন হয়। তখন ভুক্তভোগীরা তাদের আমানতকৃত টাকা শাহ সুলতান এম.সি.এস. কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর নিকট উত্তলনের আবেদন করে। তখনই তারা করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন অজুহাতে গচ্ছিত টাকা ফেরত না দিতে গড়িমসি শুরু করে।

প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওমর ফারুক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদ রানা গ্রাহকদের লগ্নিকৃত টাকা দিয়ে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে ৫-৬ একর জমি নিজেদের নামে ক্রয় করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নামে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ একর জমি রয়েছে বলে জানা যায়। টাকা ফেরতের জন্য গ্রাহকদের ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.