স্নাইপার ওয়ালির মৃত্যুর খবর এবং আমাদের দুঃখ প্রকাশ

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী স্নাইপার ওয়ালি ইউক্রেনের মারিউপলে রুশ কমান্ডোদের হাতে নিহত হয়েছেন বলে যে খবরটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, তা সঠিক নয়। টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারে ওয়ালির মুত্যর খবর প্রকাশ করা হয়েছিল। আমরা এ অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। ওয়ালি বেঁচে আছেন এবং একাধিক সাক্ষাৎকারে ও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তার মৃত্যু-সংক্রান্ত খবরটিকে ‘হাস্যকর গুজব’ বলে অভিহিত করেছেন।

স্নাইপার ওয়ালি

ফরাসি বংশোদ্ভূত এ কানাডিয়ান নাগরিক তালেবান হত্যায় পারদর্শিতার জন্য আফগানিস্তানে স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে ওয়ালি উপাধি পান। সেই থেকে ওয়ালি শব্দটি তার নামের মতো ব্যবহৃত হচ্ছে।

কানাডীয় সেনাবাহিনীর ২২ রেজিমেন্টের সঙ্গে ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়ালি। সেনাবাহিনীতে ১২ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি স্নাইপার হিসেবে দক্ষতা অর্জন করেন। ২০১৭ সালে ইরাকের মসুলে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূর থেকে এক আইএস যোদ্ধাকে ম্যাকমিলান ট্যাক রাইফেলের গুলিতে হত্যার পর থেকে তিনি বিশ্বের দীর্ঘতম হত্যার রেকর্ডধারী স্নাইপার হিসেবে পরিচিতি পান।

রয়্যাল কানাডিয়ান আর্মির চাকরি ছাড়ার পর ওয়ালি কানাডার টরন্টোতে কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করছিলেন। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিদেশি যোদ্ধাদের দেশটিতে যাওয়াও আমন্ত্রণ জানালে ওয়ালি আগ্রহ বোধ করেন। কানাডীয় সেনাবাহিনীর আরও তিনজন অবরসপ্রাপ্ত সৈনিকসহ তিনি কানাডা থেকে পোল্যান্ড হয়ে ইউক্রেনে প্রবেশ করেন।

দি সান পত্রিকাকে ওয়ালি বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে পৌঁছার পর স্থানীয়রা কোলাকুলি ও করমর্দন করে তাদের স্বাগত জানান। তার ভাষায়, আমাদের পেয়ে তারা খুব খুশি হয়েছে। মনে হচ্ছে, আমরা আগে থেকেই বন্ধু ছিলাম।

এর আগে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের খবরে বলা হয়, ইউক্রেনে পৌঁছে ওয়ালি দোনেস্ক অঞ্চলের মারিউপলে যান রুশ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে। কিন্তু মারিউপলে পৌঁছার ২০ মিনিটের মধ্যে তিনি রাশিয়ার স্পেৎসনাজ কমান্ডোদের হাতে নিহত হন বলে রাশিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা জানান। ইউক্রেন-ভিত্তিক সূত্রগুলো বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে রাশিয়ার সেনাবাহিনী-সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে ওয়ালির কথিত মরদেহের একটি ভিডিও প্রকাশ পেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে বিশ্বাস করেন। কেউ কেউ লেখেন, আফগানিস্তান ও ইরাকে বেসামরিক নাগরিক হত্যা আর রুশ কমান্ডোদের সঙ্গে লড়াই করা এক জিনিস নয়।

রুশ সেনাবাহিনী-সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেলের বরাতে এখানে খবরটি ছাপা হয়েছিল, যা গুজব বলে প্রমাণিত হয়েছে। যে টেলিগ্রাম চ্যানেলের সূত্র ধরে ওয়ালির মৃত্যুর দাবি সত্য বলে ভাবা হয়েছিল, সেটাও এরইমধ্যে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ব্যাপক সংখ্যায় অনুসৃত যেসব হ্যান্ডলকে সূত্র বলে ধরা হয়েছিল, তার অনেকগুলো এখনো সক্রিয় রয়েছে এবং এ সংক্রান্ত কিছু স্ক্রিনশট এখানে সংযুক্ত করা হলো।

কিছু স্ক্রিনশট

ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের এক সাংবাদিক গত ২২ মার্চ ওয়ালির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। একইদিন ওয়ালির ভিডিও সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কানাডার সিবিসি’র সাংবাদিক অ্যাশলি বারকি। এক সপ্তাহ যুদ্ধ করে ওয়ালি নিরাপদে ফিরে গেছেন বলে সাক্ষাৎকারে জানান।

ওয়ালি নিজেও এক ফেসবুক পোস্টে নিজের একটি ছবি সংযুক্ত করে লেখেন, আমি যুদ্ধে মারা গেছি বলে যে গুজব ছড়িয়েছে, সেটা পুরোপুরি হাস্যকর। আমি সবার শেষে এ গুজব জানতে পেরেছি। ‘লো তরচে এত লিপপে’ বা দ্য টর্চ অ্যান্ড সোর্ড নামে একটি ফেসবুক পেজ ওয়ালি ২০১৫ সালে চালু করেছেন। এখনো তিনি সে পেজে লিখে থাকেন।

যুদ্ধকালীন সময়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের চাহিদা ও আগ্রহ তীব্র হয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। স্বীকার করছি যে, ওয়ালি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে সূত্রের বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এ প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসরণ থেকে বিচ্যুত হয়েছি। আমরা ভবিষ্যতে এ ধরনের বিচ্যুতি এড়াতে সদাসতর্ক থাকবো।