‘দ্য কাশ্মির ফাইলস’ নিয়ে উত্তাল ভারত

সাম্প্রতিক সময়ে বলিউডের কোনো চলচ্চিত্র নিয়ে এতটা আলোচনা হয়নি। আলোচনা হলেও তা ছিল কেবল ছবির নির্মাণশৈলী পর্যন্তই। কিন্তু ‘দ্য কাশ্মির ফাইলস’ নিয়ে ভারতীয় রাজনীতিকদের বিশেষ করে বিজেপি নেতৃবৃন্দের যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব। একই সময়ে, যে স্থানের ঘটনা নিয়ে এই সিনেমা তৈরি, সেখানকার অবস্থা বেশ উত্তাল।

দ্য কাশ্মির ফাইলসকে ঘিরে মোদি মমতার দ্বিমুখী অবস্থান

বিবেক অগ্নিগোত্রীর ‘দ্য কাশ্মির ফাইলস’ ছবিটির পক্ষে-বিপক্ষে সমানে চলছে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি। যে কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে এই সিনেমা, সেই উপত্যকাবাসীদের বড় অংশের ভাষ্য, এটি একটি ‘উদ্দেশ্যমূলক ছবি’। এর মাধ্যমে কাশ্মিরি পণ্ডিতদের কাশ্মিরের মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর একটা চেষ্টা চলছে। তারা বরং পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এ পর্যন্ত হাজার হাজার কাশ্মিরি নিহত হয়েছেন, তাদের ঘটনাগুলো নিয়ে কেন কোনও সিনেমা তৈরি হয় না?

কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আহমেদ ওয়ানি বলেন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত ৩৩ বছরে সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন কমবেশি ২০০ কাশ্মিরি পণ্ডিত। কিন্তু ২০১৬ সালে হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানিকে হত্যার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এক সংঘর্ষে শতাধিক তরুণ-যুবক প্রাণ হারাল। সেই ঘটনা নিয়েও তো সিনেমা হতে পারে! রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ‘দ্য কাশ্মির ফাইলস’ তৈরি করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে গৈরিক শিবির (বিজেপি) নির্বাচনে এটি ব্যবহার করবে এবং দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করবে।

দ্য কাশ্মির ফাইলস

শুধু মুসলমানই নয়, একই অভিমত উপত্যকায় পণ্ডিতদের স্বার্থ নিয়ে লড়াই করা কাশ্মির পণ্ডিত সমিতির। সংগঠনের সদস্য সঞ্জয় টিকু বলেন, কিছু মানুষ এই ছবি দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চায়। তাদের ইশারাতেই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। তারা মনে হয় চাচ্ছে, এখন উপত্যকায় যেসব পণ্ডিত রয়েছেন, তাদেরও হত্যা করুক জঙ্গিরা।

সোম্যা লাখানি নামে এক কাশ্মিরি পণ্ডিত বলেন, এটি কোনো শিল্প নয়, কেবলই প্রচার। শিল্প ও প্রচারের সূক্ষ্ম ফারাক আছে। সেই পার্থক্যটা বোঝা জরুরি।

কাশ্মির কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক মুহাম্মদ শাকির বলেন, ওই ছবিতে যা দেখানো হচ্ছে, তা ঠিক নয়। জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার ডাকাতির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারে পর উপত্যকায় প্রবলভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। কথা বললেই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জেলবন্দি করা হচ্ছে। লঙ্ঘিত হচ্ছে আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো। ছবির কোথাও এগুলো উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে ‘দ্য কাশ্মির ফাইলস’-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপি নেতৃবৃন্দ। মোদির ভাষ্য অনুসারে, এমন সিনেমার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ প্রকৃত সত্য জানতে পারবে। কোনো কোনো রাজ্যে এ ছবির প্রদর্শন সহজলভ্য করতে কর মওকুফ করা হয়েছে, কোথাও বা সরকারি কর্মচারিদের ছুটি দেয়া হচ্ছে। আবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সবাইকে নিষেধ করে বলেছেন, কেউ যেন এই ছবি দেখতে যাবেন না।